লকডাউনের প্রথম দিনে চিকিৎসক-নার্সদের বাধা, জরিমানা
করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল সর্বাত্মক লকডাউনে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সরকার।কারা বাইরে যেতে পারবেন আর কারা পারবেন না এ নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।এ ছাড়া এই সময়ে সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে চিকিৎসকদের বাইরে বের হতে বাধা নেই এবং মুভমেন্ট (চলাচল) পাস লাগবে না বলে জানিয়েছিলেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ। কিন্তু কঠোর বিধিনিষেধের প্রথম দিনেই রাজধানীতে বেশ কয়েকজন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীকে আটকেছে পুলিশ। এরমধ্যে একজন চিকিৎসককে ৩ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়েছে।
ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি রাইটস অ্যান্ড রেসপনসিবিলিটিজ-এফডিআরএস জানিয়েছে, রাজধানীজুড়ে এ ধরনের বেশকিছু ঘটনা ঘটেছে।
এফডিআরএস এর যুগ্ম মহাসচিব রাহাত আনোয়ার চৌধুরী বুধবার রাতে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বুধবার লকডাউনের প্রথম দিন বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসকরা হয়রানির শিকার হয়েছেন।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ মোকাবেলায় চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীরা সম্মুখসারিতে থেকে কাজ করছেন। প্রজ্ঞাপনে চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের লকডাউনের আওতামুক্ত রাখা হয়েছে।
এ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, আমরা তো সাধে রাস্তায় বের হই না। আমরা তো চাকরি করি, হাসপাতালে না গেলে চাকরি থাকবে না। সরকার কি মেনে নেবে আমি হাসপাতালে না গেলে? যদি ঘোরাঘুরি করতে যায় তাহলে আটকালে ঠিক আছে। কিন্তু আমি কাজ করতে যাচ্ছি। আমার কার্ড দেখাচ্ছি। এরপরও হয়রানি করা হয় তাহলে তো দুঃখজনক।
রাহাত আনোয়ার বলেন, আমার ধারণা অতি উৎসাহী কেউ কেউ এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছেন। আমাদের এক চিকিৎসককে জাহাঙ্গীর গেট এলাকায় গালাগালি করা হয়েছে।
রাস্তায় ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে বের হওয়ায় স্কয়ার হাসপাতালের এক চিকিৎসককে তিন হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
স্কয়ার হাসপাতালের কোভিড ইউনিটে কর্মরত চিকিৎসক নাজমুল হক গণমাধ্যমকে জানান, সপ্তাহে তিনদিন তিনি হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করেন। তার বাবাও করোনাভাইরাস আক্রান্ত। এ কারণে গত কয়েকদিন গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জ থেকে অফিস করছেন। বুধবারও নিজের গাড়িতে করে অফিসে যাচ্ছিলেন।
তিনি বলেন, হাইকোর্টের সামনে চেকপোস্টে আমাকে পুলিশ সদস্যরা আটকায়। আমি জানি চিকিৎসকরা চলাচল করতে পারবেন। এ কারণে আমার আইডি কার্ড দেখাই। তারপরও আমার গাড়ির নামে ৩ হাজার টাকা জরিমানা লিখে দেয়।
এসব ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউসিজি) অধ্যাপক ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, ‘চিকিৎসকরা যেহেতু জরুরি পরিসেবায় নিয়োজিতদের মধ্যে পড়েন, সেহেতু পরিচয় দেওয়ার পরও তার নামে মামলা দেওয়া উচিত হয়নি। যা হয়েছে ঠিক হয়নি, মহা-অন্যায় হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘হাসপাতালে জরুরি বিভাগ তো খোলা, সে হিসেবে চিকিৎসকরা তো অবাধে কর্মস্থলে যেতে পারার কথা। তা না হলে তারা এতো রোগীর চিকিৎসা কীভাবে দেবেন? তারা যে কষ্ট করে যাচ্ছেন, এটাই তো বেশি। আর যেন এমন না হয়, তা নিশ্চিতে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।’
কর্মস্থলে যেতে পুলিশের বাধা ও ভোগান্তিতে পড়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন বেশ কয়েকজন চিকিৎসক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের নিজস্ব গ্রুপগুলোতে তারা এ নিয়ে পোস্ট দিয়েছেন।
কৃষ্ণা হালদার নামের এক চিকিৎসক লিখেছেন, ‘গত রাতে কুয়েত মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে আমার নাইট শিফটে ডিউটি ছিল। সকালে আমার ব্যক্তিগত প্রাইভেট কার পিক-আপ করার সময় কারওয়ান বাজার সিগন্যালে ড্রাইভার আমার আইডি কার্ড দেখানোর পরও পুলিশ মামলা করেছে।’
অভিযোগ করে তিনি আরও লেখেন, ‘পুলিশ তাকে ফাইন (জরিমানা) করেছে, সব কাগজপত্র নিয়ে গেছে। পরে তিনি পুলিশের সহযোগিতা চেয়েও পাননি। বারবার চেষ্টা করেও তিনি মুভমেন্ট পাস বের করতে পারেননি বলেও উল্লেখ করেছেন।’
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে কাজ করা নার্সরা বিপাকে পড়েন একদম সকালে। হাসপাতালটির নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক শাহজাদ হোসেন মাসুম লিখেছেন, ‘আমার আইসিইউর নার্সদের বহনকারী অধিদফতর থেকে স্টিকারযুক্ত গাড়ি টঙ্গী থেকে আসার সময় আটকে রাখে পুলিশ এবং জানায় মুভমেন্ট পাস ছাড়া যেতে দেবে না। তারা আমাকে কল করলে আমি পরিচালককে জানাই। তারা কোভিড আইসিইউর স্টাফ উল্লেখ করে অনেকবার অনুরোধ করলেও পুলিশ মুভমেন্ট পাস ছাড়া গাড়ি ছাড়বে না বলে জানায়। দুই ঘণ্টা আটকে থাকার পর তারা হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন।’
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অবেদনবিদ্যা (অ্যানেস্থেসিয়া) বিভাগের চিকিৎসক ইফতেখারকে ফার্মগেটে অ্যাম্বুলেন্স থেকে নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। তিনি রাতের ডিউটি সেরে বাসায় ফিরছিলেন। পরে ওই চিকিৎসক সাত কিলোমিটার হেঁটে রামপুরার বাসায় পৌঁছান।