মানব উন্নয়ন সূচকে আমাদের অর্জন

২০১৫ সালের মানব উন্নয়ন প্রতিবেদনে বাংলাদেশে তার আগের অবস্থান ধরে রেখেছে। ইউএনডিপি’র প্রকাশিত বার্ষিক মানব উন্নয়ন প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।১৮৮টি দেশের মধ্যে বাংলোদেশরে অবস্থান ১৪২তম।

প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশ তার আগের অবস্থান ধরে রেখেছে। এদিকে,  প্রতিবেশি ভারতের অবস্থান ১৩০, নেপাল ১৪৫ ও পাকিস্তান ১৪৭তম।   নরওয়ে বরাবরের মতো এবারও সূচকে প্রথমই রয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে আছে অস্ট্রেলিয়া। এর পর আছে সুইজারল্যান্ড, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস।

প্রতিবেদন অনুযায়ী গত দুই দশক ধরে আমাদের অবস্থান ইতিবাচক। অব্যহত এ  উন্নয়ন বজায় রাখা নি:সন্দেহে আমাদের জন্য একটি বড় অর্জন।

আর্থ-সামাজিক  প্রবৃদ্ধি ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে আমরা গত কয়েক বছর ধরে এগিয়ে যাচ্ছি। মূলত কর্মসংস্থানে সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ত হওয়ার জন্যই এ লক্ষ্যমাত্রায় পৌছানো সম্ভব। এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই এবছরের প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল মানব উন্নয়ন ও কাজ বা কর্মসংস্থান। কাজের সাথে উন্নয়নের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য।

উন্নত কাজের জন্য প্রয়োজন স্বাস্থ্য, উন্নত জ্ঞান ও দক্ষতা, সচেতনতা, মানব সম্পদ ও উপযুক্ত সুযোগ। এ বিষয়গুলো অর্জন সম্ভব হলেই উন্নত কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে।

একইভাবে উন্নত কর্মসংস্থান সৃষ্টি হলে আয় ও জীবন যাত্রার মান, নিরাপত্তা, নারীর ক্ষমতায়ন, অংশীদারিত্ব, মর্যাদা ও স্বীকৃতি ও সৃজনশীলতার মতো বিষয়গুলো নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। উন্নয়নের জন্য এটি একটি চক্র। এ লাইফসাইকেল অনুসরণ করেই মানব উন্নয়ন সাধিত হয়।

প্রতিবেদনে কাজ বলতে কেবল কর্মসংস্থান বুঝায়না। মূলত আর্থ-সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় কাজে মানুষের অংশগ্রহনই ‘কাজ’ এর আসল কথা। মানব উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে এমন যেকোনো ভূমিকাই কাজ’ এর মধ্যে অন্তর্ভূক্ত। মানুষের জীবন প্রবাহের কর্মের আধিক্যই উন্নয়নের সুচক। এরকম যে কোনো কাজেরই সামাজিক মূল্য আছে।  

গত দুই দশক ধরে এখানে মানব উন্নয়নের যে অগ্রযাত্রা তা সম্ভব হয়েছে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে অগ্রগতির ফলে। সেই সাথে নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও সচেতনতা বৃদ্ধির কারণে এ অগ্রগতির পথ আরো সহজতর হয়েছে।

তবে, বার্ষিক প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বে সবার জন্য কাজের সমান সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব হয়নি। একই সাথে বিদ্যমান কর্মসংস্থানের মাঝেও আছে বৈষম্য। এক্ষেত্রে বেশ কিছু বিষয়ে বৈষম্য বিদ্যমান। প্রতিবদ্ধীদের জন্য এ পথ আরো কঠিন।

গত কয়েক দশক ধরে মানব উন্নয়নে আমাদের যে অগ্রগতি তা আশা ব্যঞ্জক। গত দুই দশকে আমাদের গড় বাৎসরিক অগ্রগতি শতকরা ১.৫৫।

তবে, তথ্য প্রযুক্তি খাতে আমাদের অগ্রগতির অবকাশ আছে। এশিয়া অঞ্চলের ২.৫ বিলিয়ন মানুষ এখনো ইন্টারনেট সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এর মধ্যে আবার ১.৪ বিলিয়নই দক্ষিণ এশিয়ার জনগণ।

আগামী দিনের বিশ্বকে জয় করতে হলে তথ্যপ্রযুক্তি তথা ইন্টারনেট ছাড়া সম্ভব না। জীবনের সব ক্ষেত্রেই তথ্যপ্রযুক্তি তথা ইন্টারনেটের প্রয়োগ আরো বাড়াত হবে। এক্ষেত্রে সরকারগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। মানুষের ক্ষমতায়ন করতে হলে তথ্যপ্রযুক্তি ছাড়া সম্ভব না। আগামী দিনের আর্থসামাজিক উন্নয়ন নির্ভর করে তথ্যপ্রযুক্তির ওপর। যেদেশ যতো প্রযুক্তি নির্ভর তার অগ্রযাত্রার পথ ততো সহজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *