ধান কুড়োনোর আনন্দে মেতেছে শিশুরা

উপড়ে সুনীল খোলা আকাশ। আলের পরে আল। বিস্তীর্ন ধান খেত। ঘাসের শিশির মেখে শিশুদের কচি পায়ের দৌড়। গরু-ছাগলের মাঝে সাদা বকের সারি। হেমন্তের সোনালি রোদে চাষিরা শুকিয়ে নিচ্ছেন সোনামাখা ধান। কেটে নেয়া ধানের গাছ থেকে মাটিতে ঝড়ে পড়েছে কিছু ধানের শীষ। মাটিতে পড়ে থাকা ধানের শীষ দেখেই কচি পায়ের দৌড়। ধানের শীষ কুড়িয়ে নিচ্ছে শিশুদের দল। ধানের শীষ কুড়োনোর প্রতিযোগিতাও শুরু হয় তাদের মাঝে। 

আগে হাতে নেয়ার প্রতিযোগিতা শুরু হয়। কিছু ধান ইঁদুর নিয়ে গেছে গর্তে। জমানো খাবার হিসেবে হয়তো রেখেছিলো তারা। কিন্তু দুষ্টু শিশুর দল মাটি খুঁড়ে বের করছে সেসব ধান। এসব ধান কুড়িয়ে গ্রামীণ শিশুরা জড়ো করছে বাড়িতে। অনেক ধান হলে তারা বিক্রি করবে বাবাদের কাছেই। পিতাই দেবে সে ধানের মূল্য। দুচোখে চক চক করছে স্বপ্ন। বাবার সঙ্গে বাজারে যাবে একদিন। ধান বেচবে। তারপর সেই টাকা দিয়ে হবে নতুন জামাকাপড়, ক্রিকেটের ব্যাট, হবে পিকনিক। 

গ্রামে গ্রামে এখন বিরাজ করছে এমন দৃশ্য। মায়াময় এসব দৃশ্য দেখে স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ছেন বড়রা। শিশুদের এই আনন্দে বাধা দিচ্ছেন না বাবা মা। চাষিদের ধান কাটার উৎসবে যোগ দিয়েছে শিশুরা। তাই চাষিরাও খুশি।

পঞ্চগড়ের গ্রামীণ শিশুরা এখন ধান কুড়োনোর আনন্দে মেতেছে। শিশুদের এই ধান কুড়োনো এলাকার অনেক পুরোনো সংস্কৃতি হলেও করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে স্কুল বন্ধ থাকায় ছুটির আমেজে সব ছোট্ট বন্ধুরা মিলে ধান কুড়োচ্ছে। ধানের পরিমাণ মুখ্য না হলেও আনন্দটাই তাদের কাছে অনেক বড় ।

শিশুদের ধান কুড়োনোর আনন্দ তাদের মনোজাগতিক বিকাশে অত্যন্ত সহায়ক হবে বলে মনে করছেন শিশু বিশেষজ্ঞরা। করোনা সংকটের কারণে শহুরে শিশুরা যখন চার দেয়ালের মাঝে বন্দি হয়ে পড়েছে তখন গ্রামীণ শিশুরা এসব আনন্দে মেতে আছে। তারা প্রকৃতির সঙ্গ পাচ্ছে। এ আনন্দ তাদের দৈহিক গঠনেও কাজে লাগবে।  

পঞ্চগড় জেলা শিশু কর্মকর্তা মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, উত্তরবঙ্গে শিশুদের ধান কুড়োনো অনেক আগে থেকেই একটি প্রচলিত সংস্কৃতি। লেখাপড়ার চাপে শিশুদের আনন্দ উদযাপনের এই সংস্কৃতি প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছিলো। করোনা সংকটে স্কুল বন্ধের কারণে তারা আবার সেই আনন্দ উপভোগ করছে। শিশুদের মেধা বিকাশে এই আনন্দ বিরাট ভূমিকা রাখবে। 

উল্লেখ্য, আসছে ডিসেম্বরেই পড়বে প্রবল শীত। তখন হাড় কাঁপানো শীতে শিশুরা হয়তো জড়োসড়ো হয়ে পড়বে। তখন মাঠে থাকবে না ধান। বিশাল মাঠে দৌড়াদৌড়ি হয়তো কমে  যাবে তাদের। শীতের কাপড়ের সংকটে পড়বে তারা। আছে প্রবল ঠাণ্ডায় নানা রোগে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কাও। এ ব্যাপারে এখনি সতর্ক হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন স্থানীয় সচেতন মানুষ। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *