সরকারের সমালোচকদের বিরুদ্ধে দেশে একাধিক স্থানে মিছিল

দেশের বাইরে থেকে সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যে প্রোপাগান্ডা ও গুজবকারীদের বিরুদ্ধে রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে মিছিল বের করা হয়। আমাদের সংবাদদাতার সূত্রে জানা যায় যে ঢাকার বাড্ডা ও সিলেটের বিভিন্ন স্থানে ছাত্রলীগের কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিলে এইসব গুজবকারীদের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলবার আহবান জানান। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারের সমালচনাকারীদের ব্যাপারে ছাত্রলীগের এই ধরনের অবস্থান বাকস্বাধীনতাকে রুদ্ধ করবে বলেও অনেকে শংকা প্রকাশ করেন। এইদিকে এইসব মিছিল থেকে সরকারের সমালোচনাকারীদের দেশে ফেরত এনে তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেবার আহবান জানানো হয়। এইসব মিছিলে যুক্তরাজ্য, সুইডেন, হাঙ্গেরি,আমেরিকা প্রবাসী বিভিন্ন ব্যাক্তিদের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের কর্মীরা বিক্ষোভ করে।

এইদিকে বিদেশে রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য প্রদান বা রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পাসপোর্ট বাতিলের প্রস্তাব এসেছে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে। সচিবালয়ে বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন কমিটির সভাপতি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, ‘বিদেশে থেকে অনেক লোক মিথ্যাচার করছে। কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে বলতে পারে, কিন্তু রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বলা রাষ্ট্রদ্রোহিতা। ব্যক্তির বিরুদ্ধে বলতেই পারে। আরেকটা হচ্ছে রাষ্ট্রও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রাষ্ট্রবিরোধী যেসব কাজ বিদেশে বসে যারা করছে, তাদের যাতে পাসপোর্ট বাতিল করা হয়, সে জন্য আমরা পরামর্শ দিয়েছি।

‘তাদের তালিকা প্রস্তুত করা হোক, তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে কী কী করছে, রাষ্ট্রবিরোধী কী কাজ করল, সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যদি দেখা যায় তারা সক্রিয়ভাবে অব্যাহতভাবে এই কাজ করে যাচ্ছে, তাদের পাসপোর্ট বাতিলের জন্য উদ্যোগ নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’

বক্তব্য ও কর্মকাণ্ড দেশবিরোধী হচ্ছে তা কীভাবে নির্ধারণ করা হবে, জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, ‘দেশদ্রোহিতা ও দেশের স্বার্থবিরোধী কোনটা সেটার সংজ্ঞা আইনে আছে। রাষ্ট্রের স্বার্থ পরিপন্থি কোনগুলো সংবিধান ও সিআরপিসিতে যা আছে সেটা মেনেই সেটা করা হবে। নতুনভাবে কোনো কিছু সংজ্ঞায়িত করা হবে না।’

বিদেশে বসে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট দেশের আওয়ামী লীগ নেতাদের সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। গত শনিবার বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ‘অল ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগে’র সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। সর্ব ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগ সভাপতি এম নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানের সঞ্চালনায় আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ, উপপ্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, কার্যনির্বাহী সদস্য সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম, অস্ট্রেলিয়া আওয়ামী লীগ সভাপতি সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ সভায় অংশ নেন।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচনের আর দুই বছরের কম সময় বাকি। এই নির্বাচনে আমাদের প্রচারের একটি বড় মাধ্যম হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। আপনারা দেখছেন, আমাদের বিরুদ্ধাচারীরা, দেশের বিরুদ্ধাচারীরা দেশের বিরুদ্ধে যত ধরনের ষড়যন্ত্র, অপপ্রচার চালাচ্ছে, তার একটি বড় প্ল্যাটফর্ম হিসেবে সোশ্যাল মিডিয়াকে বেছে নিয়েছে। তারা বিদেশে বসে অপপ্রচার চালায়, বিভ্রান্তি ছড়ায়, গুজব রটায়।’

‘তারা যেসব দেশে বসে এগুলো করে, সেসব দেশে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ আছেন, কমিটিও আছে কিন্তু অপপ্রচারের বিরুদ্ধে যে পরিমাণ সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন, অনেক ক্ষেত্রে তা পাওয়া যাচ্ছে না’ বলে উল্লেখ করেন হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, নানাভাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় অপপ্রচার চালালে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমেই ব্যবস্থা নেওয়া যায়, যে দেশে বসে অন্য দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে, সেই দেশের আইন অনুযায়ীও ব্যবস্থা নেওয়া যায়। কিন্তু এটি সব ক্ষেত্রে হচ্ছে না।এইদিকে দেশব্যাপী এমন মিছিল সমাবেশের বিষয়ে জানবার জন্য ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এই ধরনের প্রতিবাদ মিছিলের উদ্দেশ্য হচ্ছে গুজবকারীদের বিরুদ্ধে একটা সংকেত। যেখানে আমরা তাদের জানিয়ে দিতে চাই যে, বাংলাদেশ সম্পর্কে মিথ্যে প্রোপাগান্ডা ছাত্রলীগ মেনে নেবে না। একই সাথে আমরা দেশবাসীকেও এইসব গুজবের বিরুদ্ধে সামনে এগিয়ে আসার আহবান জানাই।

প্রতিবেদকঃ রাসেল আলী, ঢাকা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *