করোনায় ফের মৃত্যু বাড়ছে : কারণ অনুসন্ধান
দেশে করোনায় আবারও শনাক্ত ও মৃত্যু বেড়েই চলছে। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন আরও ৩৪ জন। এ নিয়ে দেশে মোট ২৮ হাজার ৩৬৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নিয়মিত করোনা আক্রান্তের যে সংখ্যা জানাচ্ছে, বাস্তব পরিস্থিতি তার চেয়েও বেশি ভয়াবহ। তাদের মতে, করোনা পরীক্ষায় মানুষের অনাগ্রহ ও সংক্রমিতদের কোনো ব্যবস্থাপনায় না রাখায় লাগামহীন সংক্রমণ বাড়ছে। বাড়ছে মৃত্যুও।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৩ হাজার ৬ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১২ হাজার ১৮৩ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ২৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ। দেশে এ পর্যন্ত মোট শনাক্ত হয়েছে ১৭ লাখ ৮৫ হাজার ৩৩২ জন। শনাক্তের হার ২৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ।
২৯ জানুয়ারি ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে ৩৩ হাজার ৩৭৩ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১০ হাজার ৩৭৮ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত করা হয়।
২৮ জানুয়ারি ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ৪৬ হাজার ২৬৮ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৫ হাজার ৪৪০ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত করা হয়।
২৭ জানুয়ারি ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। ৪৯ হাজার ৪২৫ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৫ হাজার ৮০৭ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত করা হয়।
২৬ জানুয়ারি ১৮ জনের মৃত্যু হয়। শনাক্ত হন ১৬ হাজার ৩৩ জন।
২৫ জানুয়ারি ১৮ জনের মৃত্যু হয়। এসময়ে নতুন করে শনাক্ত হয়েছিল আরও ১৬ হাজার ৩৩ জন।
২৪ জানুয়ারি ১৫ জনের মৃত্যু হয়। ৪৫ হাজার ৮০৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৪ হাজার ৮২৮ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছিল।
২৩ জানুয়ারি ১৫ জনের মৃত্যু হয়। ৩৪ হাজার ৮৫৪ টি নমুনা পরীক্ষা করে ৩১ দশমিক ২৯ শতাংশ কোভিড-১৯ পজিটিভ পাওয়া যায়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভার্চ্যুয়াল বুলেটিনে অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. মো. রোবেদ আমিন জানান, ‘সব মহাদেশেই বর্তমানে সবচেয়ে বেশি করোনা শনাক্ত হচ্ছে। বর্তমানে ওমিক্রনের পাশাপাশি ডেলটা ধরন দুটিই অবস্থান করছে। সংক্রমণ হঠাৎ করে মাত্রাতিরিক্ত হয়ে গেলে ধরে নিতে হবে নতুন ধরনের কারণেই সংক্রমণ বেশি হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘দেশে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত করোনা সংক্রমণ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে ছিল। এরপর থেকে সংক্রমণ ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে, যেটা আমাদের জন্য খুবই সাবধানতা এবং অ্যালার্মিং বিষয়। অনেকেই হয়তো টেস্ট করছেন না, সবাই টেস্ট করলে এ সংখ্যা হয়তো আরও অনেক বাড়তো।’
গত বছরের শুরুর তুলনায় শেষ মাসে এসে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে কোভিড রোগী ছয়গুণ বেড়েছে । তাদের ‘বেশিরভাগই’ ওমিক্রনে আক্রান্ত বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে ঢামেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক বলেন, ‘গত নভেম্বরের শেষে করোনার অতি সংক্রামক নতুন ধরন ওমিক্রনের আবির্ভাবের পর ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে বাংলাদেশেও সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে। করোনা নিয়ে প্রথম দিকে যত রোগী ভর্তি হয়েছিল, তারা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হলেও বর্তমানে যত রোগী পাওয়া যাচ্ছে, এর মধ্যে অধিকাংশই ওমিক্রনে আক্রান্ত।’
ওমিক্রনের প্রভাবে দেশের আগের সব রেকর্ড ভেঙে যাবে বলে সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাদের সে কথাকেই সত্যি করে ডেল্টার সর্বোচ্চ রোগী শনাক্তের রেকর্ড ভেঙেছে ওমিক্রন। এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী ইত্তেফাক অনলাইনকে জানান, ‘দেশে এখনো ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের প্রাধান্য বেশি। তবে একটু একটু করে জায়গাটা ওমিক্রন দখল করে নিচ্ছে। দেশে ওমিক্রনের কমিউনিটি ট্রান্সমিশন তথা সামাজিক সংক্রমণ হয়েছে। তাই দেশে এখন অনেক বেশি রোগী শনাক্ত হচ্ছে। একইসঙ্গে এখন আনুপাতিকহারে মৃত্যুও বাড়ছে। মৃত্যুহার কমাতে সবাইকে সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। বাধ্যতামূলক মাস্ক পরিধান করতে হবে এবং সবাইকে টিকা গ্রহণ করতে হবে।’
এদিকে, কোভিড টিকার বুস্টার ডোজ করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ধরনে আক্রান্ত পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তিদের মৃত্যুঝুঁকি ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে আনতে পারে বলে জানিয়েছে ইউকে হেলথ সিকিউরিটি এজেন্সির (ইউকেএইচএসএ)। দুই ডোজের যেকোনো কোভিড টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার ছয় মাসের মাথায় ওমিক্রন ধরনে সংক্রমিত হলে ৫০ বছর বা তার বেশি বয়সের মানুষের মৃত্যু ঠেকাতে ৬০ শতাংশ সুরক্ষা মেলে। এই সুরক্ষাই ৯৫ শতাংশে পৌঁছায় টিকার বুস্টার ডোজ নেওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে।
বিশেষজ্ঞরা এও বলছেন, বিশ্বজুড়ে দেখা যাচ্ছে, ওমিক্রন যে হারে ঊর্ধ্বগতি পেয়েছে, সেভাবে দ্রুত নেমেও গেছে। সেই হিসাবে আগামী দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে শনাক্তের হার কমতে পারে।
উল্লেখ্য, দেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত হয় ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম ৩ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ওই বছরের ১৮ মার্চ দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। গেলো বছরের ৫ ও ১০ আগস্ট দুদিন সর্বাধিক ২৬৪ জন করে মারা যান।
সূত্রঃ ইত্তেফাক/এনই