ফিরে গেলেন নরেন্দ্র মোদি, জানালেন ধন্যবাদ
দুই দিনের সরকারি সফর শেষে ঢাকা ত্যাগ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শনিবার রাত ৯টার দিকে বিশেষ বিমানে দিল্লির উদ্দেশে রওনা দেন তিনি। তাকে বিমানবন্দরে বিদায় জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন।
সফর শেষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলায় একটি টুইটও করেছেন। টুইটে তিনি লিখেছেন, আমার সফরকালে বাংলাদেশের জনগণ যে আন্তরিকতা দেখিয়েছেন, সে জন্য আমি তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও তার উষ্ণ আতিথেয়তার জন্য ধন্যবাদ জানাই। আমার বিশ্বাস, এই সফর আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করবে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে শুক্রবার সকালে ঢাকায় আসেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মোদি বিমানবন্দর থেকে সরাসরি সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে যান। সেখানে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বীর শহিদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তিনি। পরে বিকালে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে বাঙালির ঐতিহাসিক ‘মুজিব চিরন্তন’ অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে যোগ দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে মোদি বলেন, বাংলাকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। এ অঞ্চলের উন্নতির জন্য ভারত-বাংলাদেশকে একসঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে। ভারত-বাংলাদেশ একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে যাবে বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।
এরপর রাতে ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কনফারেন্স সেন্টারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ভারতের মহাত্মা গান্ধীর সম্মানে তৈরি করা বঙ্গবন্ধু-বাপু ডিজিটাল জাদুঘর উদ্বোধন করেন নরেন্দ্র মোদি।
সফরের দ্বিতীয় দিন শনিবার সকালে মোদি সাতক্ষীরার শ্যামনগরের যশোরেশ্বরী কালীমন্দির পরিদর্শন করেন এবং পূজা দেন। পরে হেলিকপ্টারে টুঙ্গিপাড়ায় যান। সেখানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সমাধি কমপ্লেক্স ঘুরে দেখার পর পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর এবং বঙ্গবন্ধু ভবনের পাশে একটি বকুল গাছের চারা রোপণ করেন তিনি। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোটবোন শেখ রেহানা উপস্থিত ছিলেন।
পরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী কাশিয়ানীর ওড়াকান্দিতে যান। সেখানে তাকে উলুধ্বনি, শঙ্খ ও ডঙ্কা-কাঁসা বাজিয়ে বরণ করে ঠাকুরবাড়ির মতুয়া সম্প্রদায়। এরপর মোদি পূজা-অর্চনা করেন। পরে মতুয়া সম্প্রদায়ের সঙ্গে মতবিনিময় করেন মোদি।
নরেন্দ্র মোদি বিকাল ৫টায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যান। এ সময় তাকে অভ্যর্থনা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর দুই সরকারপ্রধান প্রথমে কিছু সময় একান্তে বৈঠক করেন। পরে তাদের নেতৃত্বে শুরু হয় দুই দেশের প্রতিনিধি দলের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক, যা চলে সন্ধ্যা সোয়া ৬টা পর্যন্ত।
বৈঠকে ঢাকা-নিউ জলপাইগুড়ি ‘মিতালী’ এক্সপ্রেস ট্রেনসহ কয়েকটি প্রকল্প ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করা হয়েছে।এছাড়া দুই দেশের মধ্যে ৫টি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। সমঝোতা সই ও প্রকল্প উদ্বোধন ছাড়াও বাংলাদেশকে ভারতের পক্ষ থেকে ১০৯টি অ্যাম্বুলেন্স ও ১২ লাখ করোনা টিকা উপহার দেওয়া হয়েছে। সেখানে অ্যাম্বুলেন্সের চাবি ও টিকা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে তুলে দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।
মোদি এরপর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বঙ্গভবনে যান। মোদি বঙ্গভবনে গেলে তাকে অভ্যর্থনা জানান রাষ্ট্রপতি।