অনমনীয় ঋণ দিচ্ছে এআইআইবি
কোভিড-১৯ মোকাবিলায় অর্থের জোগান বাড়াচ্ছে সরকার। এর অংশ হিসাবে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট (এআইআই) ব্যাংকের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে অনমনীয় ঋণ।
এক্ষেত্রে ৩০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দিচ্ছে ব্যাংকটি, যা স্থানীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ধরে) দাঁড়ায় প্রায় দুই হাজার ৫৫০ কোটি টাকা।
‘বাংলাদেশ কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি অ্যান্ড ক্রাইসিস রেসপন্স ফ্যাসিলিটি’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এ অর্থ ব্যয় করা হবে। ঋণটি অনমনীয় ঋণসংক্রান্ত স্থায়ী কমিটিতে অনুমোদনের কথা থাকলেও বৈঠক ছাড়াই এটি গ্রহণে সম্মত হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, অনমনীয় ঋণ নেওয়া যেতে পারে; কিন্তু সেটি কতটা কার্যকর তা নির্ভর করবে ব্যবহারের ওপর।
যেমন, এই ঋণ নিয়ে যদি কোভিডের কারণে যেসব ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প উদ্যোক্তা ক্ষতির শিকার হয়েছেন তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য ব্যয় করা যায়, তাহলে সমস্যা নেই।
আবার শিক্ষকদের টিকা দেওয়া, স্কুলে হাত ধোয়া কিংবা শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তি কিনতে সহায়তা দেওয়া বা স্যানিটাইজেশনে ব্যবহার করা হয়, তাহলে সেগুলো উৎপাদনশীল ব্যয় হবে। এক্ষেত্রে রিটার্ন আসবে।
কিন্তু যদি ঋণ নিয়ে যারা বিদেশ থেকে দেশে ফিরে এসেছেন, তাদের কাউন্সিলিংয়ের মতো কর্মসূচি নেওয়া হয়, তাহলে এরকম ঋণ না-নেওয়াই ভালো। অর্থাৎ, ঋণের টাকা টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করাটা জরুরি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক ও এডিবির কোভিড-১৯ সংক্রান্ত তহবিল থেকেও সরকারের ঋণ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া এআইআইবির এ ঋণটিও বায়ার্স ক্রেডিট (সরবরাহ ঋণ) বা বাণিজ্যিক ঋণের চেয়ে ভালো রয়েছে। এর সঠিক ব্যবহার করতে হবে।
সূত্র জানায়, অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এ প্রকল্পটির প্রস্তাব করা হয় এআইআইবির কাছে। করোনা মহামারি পরিস্থিতি মোকাবিলায় এক্ষেত্রে ৩০ কোটি ডলারের ঋণ চাওয়া হয়।
ইতোমধ্যে ব্যাংকটির পক্ষ থেকে এ ঋণ দিতে সম্মতি জানানো হয়েছে। ঋণচুক্তিসহ অন্যান্য দলিলের বিষয়ে নেগোসিয়েশন (আলাপ-আলোচনা) শেষ হয়েছে।
এ ঋণচুক্তির টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশন পর্যালোচনার পাশাপাশি ইআরডির ফাবা উইং-এর মতামতও নেওয়া হয়। এতে দেখা যায়, এ ঋণের গ্র্যান্ট এলিমেন্ট ১৮ দশমিক ১০ শতাংশ।
ফলে এটি অনমনীয় ঋণ হিসাবে গণ্য হয়। তাই ঋণচুক্তি স্বাক্ষরের আগে অনমনীয় ঋণসংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির অনুমোদন প্রয়োজন পড়েছে। সূত্র আরও জানায়, একটি এজেন্ডা নিয়ে অনমনীয় ঋণবিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভা করা যৌক্তিক নয়।
অন্য কোনো এজেন্ডা না-থাকায় এবং ঋণচুক্তিটি স্বাক্ষর করা জরুরি হওয়ায় ইআরডি থেকে নথি উপস্থাপন করা হয় অর্থমন্ত্রীর কাছে। এ পর্যায়ে অর্থমন্ত্রী ও অনমনীয় ঋণবিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি আ হ ম মুস্তফা কামাল নথিতে অনুমোদন করেছেন।
যা পরবর্তী সময়ে সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা যেতে পারে। এ ঋণের সুদের হার লাইবর (লন্ডন ইন্টার ব্যাংক অফারড রেট)-এর সঙ্গে ১ দশমিক ১০ শতাংশ।
সঙ্গে রয়েছে ফ্রন্ট এন্ড ফি বাবদ শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ এবং কমিটমেন্ট ফি দিতে হবে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ।
সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের ২০ অক্টোবর সংশোধনীর প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী যেসব ঋণের গ্র্যান্ট এলিমেন্টের মান ২৫ শতাংশের কম, সেসব ঋণ অনমনীয় ঋণ হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
এ ধরনের ঋণের ক্ষেত্রে অনমনীয় ঋণবিষয়ক স্থায়ী কমিটির অনুমোদন গ্রহণ করতে হয়। এআইআইবির এ ঋণটিও অনমনীয় ঋণের মধ্যে পড়েছে।
জরুরি অর্থের প্রয়োজন হওয়ায় ইতোমধ্যে কমিটির বৈঠক ছাড়াই ঋণটির বিষয়ে অর্থমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঋণটির দায়িত্বপ্রাপ্ত ইআরডির যুগ্ম সচিব ও এশিয়া উইং-এর প্রধান শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী যুগান্তরকে বলেন, এ বিষয়ে এই মুহূর্তে কিছু বলা যাচ্ছে না।
কেননা, আমাদের ওপর কথা বলার অনুমতি নেই। তবে শিগগির ইআরডির মুখপাত্র ঠিক করা হচ্ছে, তিনিই গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলবেন।