যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসনব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আসছে

যুক্তরাষ্ট্রের ভেঙে পড়া অভিবাসনব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার চেয়েও এ ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে অভিবাসন নিয়ে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন বাইডেন। পারিবারিক অভিবাসনে ‘পাবলিক চার্জ’ নামের বিষয়টি যাচাই করারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

বাইডেন তাঁর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মার্কিন অভিবাসনকে কঠিন করার কালাকানুন বাতিলের উদ্যোগ নিয়েছেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নানা উদ্যোগের মধ্য দিয়ে ব্যবস্থাটিকে কঠিন করে তুলেছিলেন। এর মধ্যে পারিবারিক অভিবাসনের বিষয়টি অন্যতম। বাংলাদেশের মতো দেশ থেকে পারিবারিক অভিবাসনেই এখন প্রতিবছর সবচেয়ে বেশি মানুষের অভিবাসন ঘটে আমেরিকায়।

যুক্তরাষ্ট্র প্রতিবছর ৬ লাখ ৭৫ হাজার পারিবারিক ভিসা দিয়ে থাকে। এই ভিসাপ্রাপ্তিকে দুরূহ করার জন্য ট্রাম্প নানা কড়াকড়ি আরোপ করেছিলেন। পুরোনো আইনের জের ধরে মার্কিন সরকারের ভর্তুকির মুখে পড়বে—এমন লোকজনকে গ্রিন কার্ড না দেওয়ার নির্দেশনা জারি করা হয়েছিল।

আবেদনকারীদের মধ্যে সরকারি স্বাস্থ্যবিমা, ফুড স্ট্যাম্প, সরকারি আবাসনসুবিধার মতো সামাজিক নিরাপত্তার সুযোগ গ্রহণকারীদের জন্য ভিসাপ্রাপ্তি, গ্রিন কার্ড পাওয়া বা নাগরিকত্ব পাওয়া দুরূহ হয়ে ওঠে। ‘পাবলিক চার্জ’ নামের এই নির্দেশনা নিয়ে অভিবাসী গ্রুপগুলো আদালতে যাওয়ার পরও ট্রাম্পের নির্দেশনা বহাল থাকে।

গত মার্চ মাস থেকে করোনার অতিমারির কারণে যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক দুর্দশা চলছে। দেশের অধিকাংশ নাগরিককেই সরকারি নানা সামাজিক নিরাপত্তা–সহযোগিতা নিতে হচ্ছে। অভিবাসীদের মধ্যে এসব সুবিধা গ্রহণের হার সংগত কারণেই বেশি।

সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আইন করে পারিবারিক অভিবাসন বন্ধ করে দেওয়ার কথা বলেছিলেন। ট্রাম্পের প্রস্তাব ছিল, মেধাভিত্তিক অভিবাসনের। নানা কালাকানুন করে শ্বেতাঙ্গবহুল দেশগুলো থেকে আমেরিকায় অভিবাসনের পথ উন্মুক্ত রাখার চেষ্টা করছিলেন ট্রাম্প।

অনেক মানুষ যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত হয়েছে। নথিপত্রহীন অভিবাসীদের ব্যাপকভাবে ধরপাকড় করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্ত দিয়ে আসা লোকজনকে ‘ডিটেনশন’ কেন্দ্রে দীর্ঘদিন রাখা হয়েছে। নতুন নতুন ‘ডিটেনশন’ কেন্দ্রও স্থাপন করা হয়েছে।

দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলো থেকে আসা লোকজনের জন্যও সীমান্ত কঠিন হয়ে উঠেছিল।

ট্রাম্প সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ করে অভিবাসন ঠেকানোর চেষ্টা করেছেন। তাঁর সময়ে সীমান্তে মা-বাবার সঙ্গে আসা অভিবাসী শিশুদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়।
ক্ষমতা গ্রহণ করে অভিবাসন নিয়ে ট্রাম্পের উল্টো যাত্রা থেকে দ্রুত বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন।

বাইডেন ক্ষমতায় এসেই পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন অভিবাসী শিশুদের মা-বাবার কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য টাস্কফোর্স গঠন করেছেন। নথিপত্রহীন অভিবাসীদের বিতাড়ন সাময়িকভাবে স্থগিত ঘোষণা করেছেন।

পৃথক আদেশে প্রেসিডেন্ট বাইডেন অপ্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে আমেরিকায় আসা লোকজনের অভিবাসনপ্রক্রিয়া নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন।বিজ্ঞাপন

‘ডেফার্ড অ্যাকশন ফর চাইল্ডহুড অ্যারাইভ্যালস’ (ডাকা) নামের কর্মসূচি বন্ধ করে দিয়েছিলেন ট্রাম্প। বাইডেন ক্ষমতায় এসেই ডাকা কর্মসূচি আবার চালু করেছেন। অভিবাসী এই গ্রুপকে আমেরিকার নাগরিকত্ব দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

বাইডেন প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নেওয়ার আবেদন সহজ করার উদ্যোগ গ্রহণ করছেন। ট্রাম্পের সময় বাইরের দেশে ভিন্নমত ও ভিন্ন আদর্শের কারণে নিপীড়িত লোকজনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় আবেদন কঠিন হয়ে উঠেছিল। বাইডেন আমলে আশ্রয় আবেদনকে সহজ করার জন্য নানা ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় আবেদন ভিন্নভাবে মোকাবিলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বাইডেন প্রশাসনের পক্ষ থেকে। সমস্যার উৎসের দিকে নজর দেওয়ার কথা জানানো হয়েছে।
বিভিন্ন দেশে গণতন্ত্র নিশ্চিত করা, নিপীড়ন বন্ধ করাসহ মানবাধিকার সমুন্নত রাখার জন্য আমেরিকা উদ্যোগ গ্রহণ করবে বলে জানানো হয়েছে। ফলে, বাইরের দেশ থেকে আমেরিকায় আশ্রয়ের চাপ কমবে বলে মনে করছেন নতুন প্রশাসনের নীতিনির্ধারকেরা।

ডেমোক্রেটিক পার্টির এমন অভিবাসন উদারতায় রক্ষণশীলরা ইতিমধ্যে উৎকণ্ঠিত। রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান জেমস কমার বলেছেন, বাইডেন প্রশাসনের উদার অভিবাসননীতি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠবে। সীমান্তে লোকজনের ভিড় বেড়ে গিয়ে মানবিক সংকট সৃষ্টি হবে। এ ছাড়া নথিপত্রহীন অভিবাসীদের প্রতি অনুকম্পা ঘোষণার মাধ্যমে ভুল বার্তা দেওয়া হবে। মার্কিন অভিবাসন আইন লঙ্ঘন করে সহজেই পার পাওয়া যায় বলে লোকজন আইনভঙ্গ করতে উৎসাহিত হবে বলে মনে করেন এই আইনপ্রণেতা।

আমেরিকান ইমিগ্রেশন কাউন্সিল নামের সংগঠনের পরিচালক জরগে লায়ারি বলেছেন, অভিবাসন নিয়ে পূর্বসূরি বারাক ওবামা বা ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যর্থতা থেকেই বাইডেনকে যাত্রা শুরু করতে হবে। অভিশংসন সংস্কার নিয়ে জর্জ বুশ থেকে শুরু করে পরবর্তী তিন প্রেসিডেন্টই নিজেদের মতো সংস্কার করার কথা বলেছেন। কিন্তু তাঁরা চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন।

রাজনৈতিকভাবে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে আমেরিকার সমাজ এখন বেশি বিভক্ত। প্রেসিডেন্ট বাইডেন শেষ পর্যন্ত সমন্বিত অভিবাসন সংস্কার আইন পাস করতে পারবেন কি না, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।

তবে অভিবাসী গ্রুপগুলো ও উদারনীতিকদের মধ্যে এ নিয়ে এখন আশাবাদ চরমে। তারা মনে করে, অভিবাসীদের চারণভূমি আমেরিকার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য অভিবাসনকে সহজ-মানবিক করার কোনো বিকল্প নেই।

প্রেসিডেন্ট বাইডেন ক্ষমতা গ্রহণের পরে বলেছেন, আমেরিকায় একটি মানবিক অভিবাসনব্যবস্থা চালু করা হবে।

হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, অভিবাসনের ক্ষেত্রে দ্রুতই পরিবর্তনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে আইনপ্রণেতাদের দ্রুত সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। একটি মানবিক ও ভারসাম্যপূর্ণ অভিবাসন আইন চালু না হওয়া পর্যন্ত আমেরিকায় অভিবাসীদের আগমন কাম্য নয় বলে প্রেস সেক্রেটারি জানিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *