পোড়া ঝিনুকের আয়েই চলে সংসারের চাকা

অতিথি আপ্যায়নে পান খাওয়ানো দিনাজপুরসহ উত্তরাঞ্চলের অনেক পুরনো রীতি। পান খেতে সুপারি লাগে আরও লাগে চুন। আর এই পানকে স্বাদ এবং পূর্ণাঙ্গ করে তোলে এ চুন। পানপ্রেমীদের কাছে শামুক-ঝিনুকের খোলস থেকে তৈরি চুনের কদর বেশি।

প্রায় বিপন্ন পেশাগুলোর মধ্যে ঝিনুক পুড়িয়ে চুন তৈরি করা পেশাটি অন্যতম। সেই ঝিনুক পুড়িয়েই এখনো কষ্টের সংসার চালিয়ে যাচ্ছেন দিনাজপুরের রীনা রানী (৩৫)। বেশি টাকা আয় না হলেও অভাবের সংসারে এটাই অনেক। অনেকটা চুনের চুল্লির সাদাধোঁয়ায় আচ্ছন্ন রীনার অভাবের সংসার। পোড়া ঝিনুকের সাদা চুনের আয় দিয়েই চলে তার পরিবার।
দিনাজপুরের বিরামপুরের জোতবানী ইউপির কেটর বাজারে রীনা রানীর জীর্ণ কুটির। রীনার স্বামী বিজয় কুমার চন্দ্র আর তিন সন্তান নিয়ে চলে ঝিনুক থেকে চুন তৈরির কর্মযজ্ঞ। নিজ বাড়িতে চুন তৈরির চুলা বসানোর জায়গা না থাকায় পাকা রাস্তার পাশে চুল্লি বসিয়ে তৈরি করা হয় সাদা চুন।রীনা রানীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, চুন তৈরির জন্য বাড়ির পাশের রাস্তার ওপর চুল্লি জ্বালানোর প্রস্তুতি চলছে। চুল্লির ভিতর ইট বসিয়ে সেখানে মাটির ভাঙা পাতিল টুকরো। তার ওপর থরে থরে কাঠের টুকরো। সেই কাঠের টুকরোগুলোতে আগুন দিয়ে তার ওপর ঝিনুকের আবরণ দিয়ে আবারও কাঠের টুকরো এরপর ঝিনুক দিয়ে পুরো চুল্লিকে সাজানো হয়েছে। পরে সেগুলোকে ছাকনি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে পানি মিশিয়ে তৈরি হয় চুন।

এ সময় রীনা রানী বলেন, এক চুল্লি চুন তৈরিতে ব্যবহার হয় পাঁচ ডালি ঝিনুকের খোলস। সেই ঝিনুক আবার স্থানীয়সহ পাশের উপজেলার আদিবাসী গ্রামগুলো থেকে কিনে আনতে হয়। কখনো কখনো বৃষ্টি এলে পুরো চুল্লির চুন নষ্ট হয়ে যায়। যদি ভালোভাবে এক চুল্লি চুন তৈরি করা যায় তবে সেখান থেকে ১ মণ চুন উৎপাদন হবে। বর্তমান বাজারে সেই চুনের মূল্য ১৮০০ থেকে ২০০০ টাকা।

রীনা রানীর স্বামী বিজয় চন্দ্র বলেন, ‘এক চুল্লি ঝিনুক পুড়িয়ে প্রায় ১ মণ চুন তৈরি হয়। সেই চুন স্থানীয় কয়েকটি বাজার ঘুরে সপ্তাহ ধরে বিক্রয় করতে হয়। যে পরিমাণ আয় হয় তা দিয়ে কোনোমতে সংসার চলছে। ১৫ বছর আগে রংপুরের পীরগঞ্জ থেকে এক প্রকার বিপদে পড়েই এখানে এসেছি। চুন তৈরির কৌশল আমার স্ত্রীকে শিখিয়েছি। প্রায় দিন আমি অন্যের জমিতে দিনমজুরি করি। করোনার কারণে এখন ঠিকমতো কাজও পাই না।  চুন ব্যবসার মূলধন বাড়ানোর জন্য সরকার থেকে সহজ শর্তে ঋণ পেলে আমরা খুব উপকৃত হব।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *