যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ট্রাম্প-সমর্থকদের সহিংসতার আশঙ্কা
বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্রে বড় ধরনের নাশকতার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
নাশকতার আশঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্রের নগর-মহানগরে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সর্বত্র সতর্কাবস্থা লক্ষ করা গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠানকে ঘিরে এ নাশকতার আশঙ্কা করা হচ্ছে। পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে সময়ের আগে ক্ষমতাচ্যুত করলেও তাঁর সমর্থকদের মধ্যে সহিংস আচরণ দেখা যেতে পারে। এ নিয়ে এফবিআইসহ যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অন্যান্য সংস্থা মাঠে নেমেছে।
শুধু রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি নয়, ৫০ অঙ্গরাজ্যের কেন্দ্রীয় স্থাপনাগুলো হামলার লক্ষ্যবস্তু হতে পারে। এ ব্যাপারে প্রচারপত্রও বিলি করা হচ্ছে।
২০ জানুয়ারি বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠান নির্বিঘ্ন করতে ১৫ হাজার অতিরিক্ত ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করা হচ্ছে।
বাইডেন বলেছেন, উন্মুক্ত স্থানে শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তিনি বা ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস মোটেই ভীত নন।
অতিরিক্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করে ২০ জানুয়ারির শপথ অনুষ্ঠান সাজানো হচ্ছে। ছয় দিন আগে থেকেই সবকিছু প্রস্তুত থাকবে।
এদিকে, কার্যকর নিরাপত্তার নির্দেশনা দিয়ে ভারপ্রাপ্ত হোমল্যান্ড সিকিউরিটি–প্রধান চ্যাড উলফ নিজেই পদত্যাগ করেছেন।
ট্রাম্পের আহ্বানে ৬ জানুয়ারি ওয়াশিংটন ডিসিতে জড়ো হওয়া লোকজন ফের সহিংসতায় জড়িত হতে পারে বলে তদন্তে আভাস মিলছে। শুধু তা-ই নয়, বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে সাবেক সেনা ও পুলিশের লোকজন সমাবেশে যোগ দিয়ে সহিংসতায় অংশ নিতে পারে। এ নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে নতুন করে উদ্বেগ দেখা যাচ্ছে। সাবেক এসব পেশাজীবীকে নিয়ন্ত্রণের জন্য এখন আগাম ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
ট্রাম্প-সমর্থক উগ্রবাদীরা আমেরিকার প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে সশস্ত্র মহড়ার আহ্বান জানিয়েছেন। ২০ জানুয়ারি নতুন প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণের আগে ১৭ জানুয়ারি তাঁরা এমন সমাবেশের জন্য প্রচারণা চালাচ্ছেন।
এফবিআইয়ের অভ্যন্তরীণ একটি স্মারক উল্লেখ করে এবিসি নিউজসহ অন্যান্য সংবাদমাধ্যম বলেছে, ট্রাম্পকে সময়ের আগে ক্ষমতাচ্যুত করার যেকোনো প্রয়াসে সহিংসতা সৃষ্টি হতে পারে। প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের আদালত ভবন, অঙ্গরাজ্য সভা, নগর ভবন, ফেডারেল ভবন হামলার লক্ষ্যবস্তু হতে পারে।
ইতিমধ্যে কংগ্রেসে ট্রাম্পকে অভিশংসন করার প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়েছে। অভিশংসন প্রস্তাবটি আগামীকাল বুধবার আলোচনায় যেতে পারে।
ডেমোক্র্যাটদের পক্ষ থেকে আশা করা হচ্ছে, ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স মার্কিন সংবিধানের ২৫তম সংশোধনী বলবৎ করবেন। এই সংশোধনীতে প্রেসিডেন্টকে দায়িত্ব পালনে অযোগ্য ঘোষণা করে ভাইস প্রেসিডেন্ট নিজেই ক্ষমতা পরিচালনা করতে পারেন।
ট্রাম্পকে ক্ষমতাচ্যুত করার পদক্ষেপে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে এফবিআই স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে সতর্ক করে দিয়েছে। রক্ষণশীল উগ্রবাদীদের তৎপরতার ওপর নজর রাখা হচ্ছে। প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে ১৬ থেকে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত বিশেষ নিরাপত্তা সতর্কতা গ্রহণ করার জন্য এফবিআইয়ের পক্ষ থেকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।
সহিংসতার হুমকির মুখেও আমেরিকাকে ঐক্যবদ্ধ করার চেতনা ধারণ করে বাইডেনের অভিষেক অনুষ্ঠান সাজানো হচ্ছে।
যদিও ওয়াশিংটন ডিসির মেয়র এই দিনটিতে নগরী এড়িয়ে চলার জন্য লোকজনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
আমেরিকার শত বছরের ঐতিহ্য ও উৎসবের উপলক্ষ নতুন প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণের অনুষ্ঠান। এই প্রথমবারের মতো এ অনুষ্ঠানকে ঘিরে চলছে নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।
গত ১৫০ বছরের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো বিদায়ী প্রেসিডেন্ট শপথ অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকবেন।
বাইডেনের বিজয়কে ট্রাম্প মেনে নিতে পারেননি। এ জন্য নির্বাচনী প্রতিপক্ষকে তিনি অভিনন্দনও জানাননি। বাইডেনের অভিষেক অনুষ্ঠানে তিনি উপস্থিত থাকবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। অবশ্য ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স সস্ত্রীক এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।
সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, জর্জ বুশ, বিল ক্লিনটন শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। ক্ষত ভুলে গিয়ে ঐক্য ও সংহতির আহ্বান জানাবেন তাঁরা। তবে বেপরোয়া আচরণের প্রতিভূ ট্রাম্প ও তাঁর সমর্থকদের কাছে এমন শান্তির বাণী যে পৌঁছাচ্ছে না, সে আলামত লক্ষণীয় হয়ে উঠেছে।