প্রচারে করোনার ঝুঁকি
ভোটারদের জড়িয়ে ধরে কিংবা হাত মিলিয়ে চাওয়া হচ্ছে ভোট
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে চলছে প্রচার। সোমবার বন্দরনগরীর হালিশহর এলাকায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী (বাঁয়ে) ও পাঁচলাইশ এলাকায় বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেনের গণসংযোগ।
বৈশ্বিক মহামারির কারণে প্রায় ১০ মাস প্রচারণাসহ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সব কার্যক্রম স্থগিত থাকার পর আবারও শুরু হয়েছে প্রার্থীদের প্রচারণাসহ নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তোড়জোড়। করোনাভাইরাসের এমন সময়ের মধ্যেই দিনভর প্রচারণার মাধ্যমে ভোটের মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন মেয়র পদের প্রধান দুই প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী, ডা. শাহাদাত হোসেনসহ নির্বাচনী মাঠে থাকা প্রায় আড়াইশ প্রার্থী। জনসমাগমে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা অত্যধিক থাকার কথা স্বাস্থ্য প্রশাসন ও কমিশন বারবার সতর্ক করলেও বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীকে নিয়ে প্রতিদিনই দিনভর প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। গণসংযোগের সময় প্রার্থীদের মুখে মাস্ক থাকলেও বেশিরভাগ কর্মী-সমর্থক মাস্ক ব্যবহার করছেন না। একে অপরের সঙ্গে গা ঘেঁষে, ভোটারদের জড়িয়ে ধরে বা করমর্দন করে ভোট চাইছেন প্রার্থী ও সমর্থকরা। এতে বাড়ছে করোনা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা।
লম্বা বিরতির পর নির্বাচন কমিশনের নতুন তফসিল অনুযায়ী গত ৮ জানুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার শুরু করেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। প্রচার শুরুর প্রথম দিন থেকেই মেয়র পদে বিশেষ করে নির্বাচনে সম্ভাব্য মূল প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরী ও বিএনপি প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে দিনভর গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এ দুই প্রার্থীর মতো নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন অপর মেয়র এবং সাধারণ ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর প্রার্থীরাও। গত কয়েক দিনে রেজাউল করিম চৌধুরী ও ডা. শাহাদাত হোসেন নগরের বহদারবাড়ি জামে মসজিদ, শাহ আমানত মাজার, দক্ষিণ পাহাড়তলী, জালালাবাদ, পাঁচলাইশ, হজরত বদর আউলিয়ার মাজার, বক্সিরহাট, চেরাগি পাহাড়, পাথরঘাটা, ফিরিঙ্গীবাজার, কোতোয়ালি মোড়, লালদীঘি, আন্দরকিল্লা, নতুন ফিশারি ঘাট, মিউনিসিপ্যাল মডেল স্কুল, ঈদগাহ মোড়, চালিতাতলী বাজার, অক্সিজেন মোড়, নয়াহাট, পাঠানপুর, এনায়েতবাজারসহ বেশ কিছু এলাকায় গণসংযোগ করেন। গণসংযোগে প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে নিজ নিজ দলের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীকে উপস্থিত হতে দেখা যায়। এ সময় অনেক কম বয়সী কর্মী সেখানে উপস্থিত হলেও বেশিরভাগেরই মুখে দেখা যায়নি মাস্ক কিংবা কোনো সুরক্ষা সামগ্রী। সংকীর্ণ একটি স্থানে একসঙ্গে গাদাগাদি করে নিজ দলের প্রার্থীর পোস্টার ও প্রতীক নিয়ে প্রচারণা চালান তারা। প্রধান দুই মেয়র প্রার্থীর মতো একই পরিস্থিতি দেখা গেছে বেশিরভাগ কাউন্সিলর প্রার্থীর প্রচারণা ও গণসংযোগে। বন্দরনগরী চট্টগ্রামে এরই মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ৩৬৬ জন।
এ প্রসঙ্গে রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পাশাপাশি দলীয় সভানেত্রীও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সবাইকে জনসমাগম এড়িয়ে চলার নির্দেশনা দিয়েছেন। বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে স্বাস্থ্যবিধির প্রতি লক্ষ্য রেখেই নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছি। জনসমাগমে করোনা সংক্রমণ বাড়ার ঝুঁকি বেশি থাকায় এ বিষয়ে নেতাকর্মীদেরও নানা নির্দেশনা দিয়েছি। অবশ্য অনেকে অবচেতন মনে নির্দেশনা মানছেন না। মাস্ক না পরেই গণসংযোগে উপস্থিত হচ্ছেন। সবাই সচেতন না হলে এ সমস্যার সমাধান হবে না।’
করোনাভাইরাস সম্পর্কে ভোটারদের সচেতন করতে গত শনিবার বিএনপির দলীয় কার্যালয় নাসিমন ভবনে মাস্ক বিতরণ করেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন। ওই দিন বেশ কিছু এলাকার ভোটারদের মাঝেও মাস্ক বিতরণ করেন তিনি। তবে মাস্ক বিতরণ করলেও উল্টোচিত্র দেখা যায় তার প্রচারণা ও গণসংযোগে। নিজে মুখে মাস্ক পরে গণসংযোগ চালালেও বেশিরভাগ নেতাকর্মীর নজর নেই সেদিকে। ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘নির্বাচনের চেয়ে মানুষের জীবন রক্ষা জরুরি। বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে মাস্ক নিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছি। করোনাভাইরাস সম্পর্কে ভোটারদের সচেতন করতে নানা বার্তা দিচ্ছি।
চট্টগ্রামে করোনা প্রতিরোধে গঠিত জেলা কমিটির সদস্য সচিব ও সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বী সমকালকে বলেন, ‘জনসমাগমে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বেশি। সিটি নির্বাচনের প্রচারণায় অনেক মানুষের সমাগম থাকায় ঝুঁকিও বেশি। তাই জনসমাগম এড়িয়ে চলার পরামর্শ আমাদের। এ জন্য মুখে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর নজর দিতে হবে প্রার্থী ও সমর্থকদের।’
চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, ‘করোনাভাইরাসের ঝুঁকি থেকে প্রার্থী, সমর্থক ও ভোটারদের রক্ষা করতে ডিজিটাল প্রচারণার ওপর গুরুত্বারোপ করছে কমিশন। এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন করতে কমিশনের পক্ষ থেকে সুরক্ষা সামগ্রীর পাশাপাশি প্রচারপত্র বিতরণ করা হচ্ছে। প্রার্থীদের কাছ থেকে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।’
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ওমর ফারুক সমকালকে বলেন, ‘নির্বাচনের মাঠ পর্যায়ের যাবতীয় বিষয় মনিটরিং করতে গিয়ে মাস্ক ছাড়াই প্রচারণায় অংশ নেওয়ার অহরহ প্রমাণ পাচ্ছি। অনেকে মাস্ক পরার ক্ষেত্রে প্রকাশ করছে অনীহা; দেখাচ্ছেন নানা অজুহাতও। বিষয়টি উদ্বেগের।’
মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন রেজাউল ও শাহাদাত
প্রচারণা শুরুর চতুর্থ দিনে গতকাল সোমবার দিনভর বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে গণসংযোগ করেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী ও বিএনপির ডা. শাহাদাত হোসেন। সকালে এমএ আজিজের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে কবর জিয়ারত করে আয়োজিত সভায় যোগ দেন রেজাউল করিম চৌধুরী। দুপুরের পর নগরের ৪নং চান্দগাঁও ওয়ার্ডে গণসংযোগ করেন তিনি। এর পর মোহরা ও পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ডে গণসংযোগ করেন রেজাউল করিম। অন্যদিকে চান্দগাঁও ওয়ার্ডে নেতাকর্মীদের নিয়ে ধানের শীষে ভোট চেয়ে গণসংযোগ করেন ডা. শাহাদাত। বিকেলে নগরের পশ্চিম ষোলশহর ও ৪৩নং আমিন শিল্পাঞ্চল ওয়ার্ডে গণসংযোগ করেন তিনি। দিনভর প্রচারণায় সরব ছিলেন অন্য প্রার্থীরাও।