তিতাসের ২১ দুর্নীতির উৎস পেয়েছে দুদক

তিতাসের ২১টি সম্ভাব্য দুর্নীতির উৎস চিহ্নিত করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এসব দুর্নীতি প্রতিরোধে ১২ দফা সুপারিশও করেছে সংস্থাটি। আজ বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে প্রতিবেদনটি বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর হাতে তুলে দেন দুদকের কমিশনার (অনুসন্ধান) মোজাম্মেল হক খান।

২১টি সম্ভাব্য দুর্নীতির উৎস:

অবৈধ সংযোগ, নতুন সংযোগে অনীহা এবং অবৈধ সংযোগ বৈধ না করা, অবৈধ লাইন পুনঃ সংযোগ, অবৈধ সংযোগ বন্ধে আইনগত পদক্ষেপ না নেওয়া, অদৃশ্য হস্তক্ষেপে অবৈধ সংযোগ, গ্যাস সংযোগে নির্দিষ্ট নীতিমালা অনুসরণ না করা, বাণিজ্যিক শ্রেণির গ্রাহককে শিল্প শ্রেণির গ্রাহক হিসেবে সংযোগ প্রদান, মিটার টেম্পারিং, অনুমোদনের অতিরিক্ত বয়লার ও জেনারেটর এ গ্যাস সংযোগ, মিটার বাইপাস করে সংযোগ প্রদান সংক্রান্ত দুর্নীতি, এস্টিমেশন অপেক্ষা গ্যাস সরবরাহ কম করেও সিস্টেম লস দেখানো, ইচ্ছাকৃতভাবে ইভিসি-ইলেকট্রনিক ভলিয়ম কারেক্টর না বসানো ইত্যাদি

এসব দুর্নীতি প্রতিরোধে কমিশন ১২ দফা সুপারিশ করেছে।

এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল: মিটার টেম্পারিং রোধে গ্রাহক পর্যায়ে গ্যাসের অপচয় বন্ধ করতে ডিস্ট্রিবিউশন এবং গ্রাহক উভয় ক্ষেত্রে প্রিপেইড মিটার চালু করা, মোবাইল কোর্টের আদলে আকস্মিক পরিদর্শনের ব্যবস্থা করা।

প্রতিবেদন প্রণয়নে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিষ্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড এর আইন, বিধি, পরিচালনা পদ্ধতি, সরকারি অর্থ অপচয়ের দিকসমূহ পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করে এই প্রতিষ্ঠানের সীমাবদ্ধতা ও প্রতিবন্ধকতা ইত্যাদি বিবেচনা করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

দুদকের প্রতিবেদনা বলে হয়, দুর্নীতি দমন কমিশন দৃঢভাবে বিশ্বাস করে, সরকারি সেবা প্রদান প্রক্রিয়ায় পদ্ধতিগত সংস্কারের মাধ্যমে ঘুষ, দুর্নীতি, দীর্ঘসূত্রিতা এবং জনহয়রানি লাঘব করার পথকে সুগম করা যেতে পারে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, দুর্নীতি প্রতিরোধে সরকারি সেবা প্রদানে দীর্ঘসূত্রিতা, জনহয়রানি প্রশমনে সমন্বিত উদ্যোগের কোনো বিকল্প নেই।

দুদক দুর্নীতি দমন, নিয়ন্ত্রণ, প্রতিরোধ ও উত্তম চর্চার বিকাশে বহুমাত্রিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এই কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে সুশাসন, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং হয়রানিমুক্ত সরকারি পরিষেবা নিশ্চিত করতে কমিশন ২০১৭ সালে কমিশনের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক প্রাতিষ্ঠানিক টিম গঠন করে।

এতে বলা হয়, প্রাতিষ্ঠানিক টিম সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি অনিয়ম ও ব্যবস্থাপনার উৎস ও কারণগুলো চিহ্নিত করে তা প্রতিরোধে সুপারিশ প্রণয়ন করে থাকে। এই প্রাতিষ্ঠানিক টিমের সদস্যরা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অংশের সাথে আলোচনা, বিভিন্ন নথি পর্যালোচনা, ওই সকল প্রতিষ্ঠানে বিদ্যমান আইন ও বিধি বিধান বিশ্লেষণ, সরেজমিনে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিদর্শন, গণমাধ্যম থেকে প্রাপ্ত তথ্যাদি এবং কমিশনের গোয়েন্দা উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্যাদি পর্যালোচনা করে সুপারিশমালা প্রণয়ন করে থাকে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮ সালে কমিশন কর্তৃক তিনটি প্রাতিষ্ঠানিক টিমের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। ২০১৯ সালে স্বাস্থ্যখাত, বাংলাদেশ বিমান, বেসামরিক বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষ এবং হিসাব রক্ষণ অফিস সমূহের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর নিকট হস্তান্তর করা হয়েছ।

এতে বলা হয়, আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এসব সুপারিশ পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করা হলে এ সকল খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হবে। সরকারি সেবা প্রাপ্তিতে হয়রানি কমে যাবে এবং সরকারি দপ্তরগুলোতে বিদ্যমান অব্যবস্থাপনা অনেকাংশে কমে আসবে। আমরা মনে করি পদ্ধতিগত সংস্কারের মাধ্যমে সরকারি সেবা প্রদানের পথকে মসৃণ করা যেতে পারে। কমিশন চায় দুর্নীতি ঘটার আগেই তা প্রতিরোধ করতে। তাই কমিশন বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক টিমের মাধ্যমে বিভিন্ন সরকারি দপ্তর বা সংস্থার দুর্নীতি উৎস চিহ্নিত করে তা বন্ধের সুপারিশ প্রণয়ন করে সরকারের নিকট প্রেরণ করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *