বছরজুড়ে আলোচনায় ধর্ষণ যৌন নির্যাতন

* রায় পরিবর্তন করে মৃত্যুদণ্ড
* সুনামগঞ্জে চলন্ত বাসে ধর্ষণের চেষ্টা, লাফিয়ে পড়ে কলেজছাত্রী আহত
* এমসি কলেজে স্বামীকে বেঁধে গৃহবধুকে ধর্ষণের চার্জশিট
* নোয়াখালীতে গৃহবধূ নির্যাতনের মামলার শুনানী চলছে
নাছির উদ্দিন শোয়েব : করোনা মহামারির মধ্যেও বিদায়ী বছরে ধর্ষণ-নারীর প্রতি সহিংসতার পারদ ছিল ঊর্ধ্বমুখী। মানবাধিকার সংস্থার জরিপে উল্লেখ করা হয়েছে- যৌন সহিংসতা-নিপীড়ন বেড়েছে প্রকটভাবে। পথেঘাটে, গণপরিবহনে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বা অনলাইনে। পারিবারিক নির্যাতনও কমেনি। রাজধানীর কুর্মিটোলায় ঢাবি শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ, সিলেটে এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে স্বামীকে বেধে রেখে স্ত্রীকে তুলে নিয়ে গণধর্ষণ এবং নোয়াখালীতে গৃহবধুকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ভিডিও ভাইরালের ঘটনায় দেশজুড়ে ব্যাপক তোলপাড় হয়। ঢাবিছাত্রী ধর্ষণ মামলার একমাত্র আসামি মজনুকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে ধর্ষণ মামলায় ৮ ছাত্রলীগ কর্মীকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেয়া হয়েছে। নোয়াখালীর চাঞ্চল্যকর গৃহবধূকে নির্যাতন ও ধর্ষণ মামলায় প্রধান আসামি দেলোয়ার হোসেন ওরফে দেলুসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবি আই)। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে অনেকগুলো ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ শনিবার বিকেলে সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে চলন্ত বাসে এক ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায় বাসের চালক ও সহকারিরা। ওই ছাত্রী চলন্ত বাস থেকে লাফিয়ে পড়ে আহত হয়ে নিজেকে রক্ষা করেন।
ধর্ষণ ও শ্লীলতাহানির ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় সারাদেশে ব্যাপক বিক্ষোভ- আন্দোলনের মুখে আইন পরিবর্তন করতে বাধ্য হয় সরকার। গত ১২ই অক্টোবর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন করে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান যোগ করার সিদ্ধান্ত অনুমোদন করে মন্ত্রিসভা। এর পরদিন এ সংক্রান্ত একটি অধ্যাদেশে সই করেন রাষ্ট্রপতি, যার ফলে সংশোধিত আইনটি কার্যকর হয়েছে। দেশে ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ধর্ষণ, ধর্ষণ জনিত কারণে মৃত্যুর শাস্তি প্রসঙ্গে ৯(১) ধারায় এতদিন ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। তবে ধর্ষণের শিকার নারী বা শিশুর মৃত্যু হলে বা দল বেধে ধর্ষণের ঘটনায় নারী বা শিশুর মৃত্যু হলে বা আহত হলে, সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল মৃত্যুদণ্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। সেই সঙ্গে উভয় ক্ষেত্রেই ন্যূনতম এক লাখ টাকা করে অর্থ দণ্ডের বিধানও রয়েছে। সেই আইনে পরিবর্তন এনে ধর্ষণের অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলেই মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবনের বিধান রাখা হয়েছে। সেই সঙ্গে অর্থদণ্ডের বিধানও থাকছে। এর ফলে ধর্ষণের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান দেয়া সপ্তম দেশ হলো বাংলাদেশ। তবে সাজা কঠোর করা হলেও দেশে ধর্ষণ কমেনি বলে মানবাধিকার সংস্থার তথ্যে উল্লেখ করা হয়েছে।
বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) জানিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে ৯৭৫ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ২০৮ জন। এছাড়া ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছেন ৪৩ জন এবং ১২ জন আত্মহত্যা করেছেন। বিবৃতিতে বলা হয়, গত ৯ মাসে ১৬১ নারী যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে যৌন হয়রানির কারণে আত্মহত্যা করেছেন ১২ জন নারী। আর যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে ৩ নারী ও ৯ পুরুষ নিহত হয়েছেন। আসক জানায়, এ সময়ে দেশে যৌন হয়রানি ও সহিংসতা, ধর্ষণ ও হত্যা, পারিবারিক নির্যাতন, যৌতুকের জন্য নির্যাতন, গৃহকর্মী নির্যাতন, এসিড নিক্ষেপসহ নারী নির্যাতনের অনেক ঘটনা ঘটেছে। তবে সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে নারী ধর্ষণ, হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনার সংখ্যা ও এর ভয়াবহতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সংগঠনটি আরও জানায়, গত ৯ মাসে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৪৩২ জন নারী। এর মধ্যে হত্যার শিকার হন ২৭৯ নারী এবং পারিবারিক নির্যাতনের কারণে আত্মহত্যা করেছেন ৭৪ নারী।
সুনামগঞ্জে চলন্ত বাসে ধর্ষণের চেষ্টা, লাফিয়ে পড়ে কলেজছাত্রী আহত: সুনামগঞ্জের দিরাই পৌর শহরে চলন্ত বাসে একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছেন ওই বাসের চালক ও চালকের সহকারী। নিজেকে রক্ষা করতে গিয়ে বাস থেকে লাফ দেয় ওই ছাত্রী। এতে গুরুতর আহত হয়েছে সে। পরে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন। সুনামগঞ্জ-দিরাই সড়কের দিরাই পৌরসভার সুজানগর এলাকায় শনিবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ বাসটি জব্দ করেছে। তবে চালক ও তার সহকারী পলাতক রয়েছেন। এদিকে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টার ঘটনায় থানায় তিনজনের নামে মামলা হয়েছে। ওই ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে দিরাই থানায় মামলাটি করেন। তবে এ ঘটনায় এখনো কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।
ওই ছাত্রীর বরাত দিয়ে তার চাচা গণমাধ্যমকে বলেন, দিরাই পৌর শহরে তাদের বাড়ি। তার ভাতিজি একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। তার বড় বোনের বিয়ে হয়েছে সিলেটে। সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের পাশেই তাঁদের বাড়ি। বড় বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল ছোট বোন। দুপুরে সিলেট থেকে দিরাইগামী একটি যাত্রীবাহী বাসে তাকে তুলে দেন তার বড় বোনের স্বামী। বাসটি যাত্রাপথে বারবার থেমে যাত্রী ওঠানামা করতে করতে আসছিল। একপর্যায়ে বাসটিতে তার ভাতিজি একা হয়ে পড়েন। তখন সুযোগ পেয়ে বাসের সহকারী তার পোশাক ধরে টানাহেঁচড়া শুরু করেন। ধস্তাধস্তির এক ফাঁকে তার ভাতিজি বাস থেকে লাফ দিয়ে নেমে পড়ে। এতে সে গুরুতর আহত হয়। ওই ছাত্রীর মাথার আঘাত গুরুতর হওয়ায় তাকে রাতেই দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তার চাচা রাত সাড়ে আটটায় জানান, তারা সিলেটের পথে আছেন।
পথচারীরা ঘটনাটি দেখতে পেয়ে ওই ছাত্রীকে রাস্তা থেকে গুরুতর আহতাবস্থায় উদ্ধার করে দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। খবর পেয়ে পরে পরিবারের লোকজন সেখানে যান। বাসটি পৌঁছানোর আগেই পথচারীরা এ খবর দিরাই বাসস্ট্যান্ডে জানালে সেখানে বাধার মুখে বাস রেখে পালিয়ে যান চালক ও তার সহকারী। ওই ছাত্রীর মাথার আঘাত গুরুতর হওয়ায় তাকে রাতেই দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তার চাচা রাত সাড়ে আটটায় জানান, তারা সিলেটের পথে আছেন। মাথার আঘাতের কারণে তার আহত ভাতিজি ভীষণ কাতরাচ্ছে। দিরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম বলেন, তারা জানতে পেরেছেন, একা পেয়ে বাসের চালক ও তার সহকারী মেয়েটির শ্লীলতাহানির চেষ্টা করছিলেন। মেয়েটি তখন বাস থেকে লাফিয়ে নামতে গিয়ে মাথায় আঘাত পেয়েছে। পুলিশ বাসটি জব্দ করেছে। বাসের চালক ও তার সহকারীকে ধরতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।
কুর্মিটোলায় ঢাবিছাত্রী ধর্ষণ: বছরের শুরুতে (৫ জানুয়ারি) ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়র (ঢাবি) ছাত্রী বান্ধবীর দাওয়াতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষণিকা বাসে করে তার বান্ধবীর বাসা শেওড়ার উদ্দেশে রওনা হন। সন্ধ্যা ৭টায় শেওড়া বাসস্ট্যান্ডে না নেমে কুর্মিটোলা বাসস্ট্যান্ডে নেমে যান তিনি। ওইসময় ছাত্রী বুঝতে পারেন, তিনি ভুল করে নেমে পড়েছেন। ভুল বুঝতে পেরে তিনি ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে থাকেন। এরপর পেছন থেকে হঠাৎ তাকে পাশের কাটা ঝোপের ভেতরে ফেলে দেয় এক ব্যক্তি। তখন ওই ছাত্রী চিৎকার করতে থাকলে ওই ব্যক্তি গলা চেপে ধরেন এবং মুখে, বুকে ও পেটে কিল ঘুষি মারেন। এরপর ওই ছাত্রী নিস্তেজ হয়ে যান। একপর্যায়ে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। তখন তাকে ধর্ষণ করা হয়। ধর্ষণের পরে সে ছাত্রীর ব্যাগ থেকে একটি প্যান্ট বের করে তাকে পরিয়ে দেয়। ছাত্রীর জ্ঞান ফেরার পরে দেখেন তার পরনে যে প্যান্ট ছিল সেটা আর নেই। ছাত্রী তখন চলে যাওয়ার চেষ্টা করলে ধর্ষক টাকা, মোবাইল ফোন ও ব্যাগ ছিনতাইয়ের জন্য গলা চেপে ধরে এবং কিল ঘুষি মারে। এরপরে ছাত্রীর মুখ ও গলায় ফোলা ও কাঁটা ছেড়া জখম করে। একপর্যায়ে সে দুই হাজার টাকা, মোবাইল  ও ব্যবহৃত ব্যাগ ছাত্রীর কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়। এরপর ছাত্রী দৌড়ে রাস্তা পার হয়ে একটি রিকশায় ওঠেন এবং তার বান্ধবীর বাসায় যান। বান্ধবীকে বিষয়টি জানালে ছাত্রীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়। পরে ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে ক্যান্টনমেন্ট থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। এরপর গত ৮ জানুয়ারি ক্যান্টনমেন্ট থানাধীন শেওড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে ধর্ষণের ঘটনায় মাদকাসক্ত ভবঘুরে মজনুকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। গত ৯ জানুয়ারি আদালত মজনুর সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গত ১৬ জানুয়ারি মজনু দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন। গত ১৯ নভেম্বর ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে এই মামলার রায় ঘোষণা করেন। মামলার একমাত্র আসামি মজনুর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। একইসঙ্গে তাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মাত্র ১৩ কর্মদিবসে আলোচিত মামলার কার্যক্রম শেষ করে এই রায় ঘোষণা করা হয়।  
এমসি কলেজে বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণ: গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে সিলেটের এমসি কলেজের ক্যাম্পাসে ঘুরতে গিয়ে এক তরুণীকে ক্যাম্পাস থেকে তুলে ছাত্রাবাসে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়। নববধূ ওই তরুণী তার স্বামীর সঙ্গে এমসি কলেজে ঘুরতে আসেন। তার স্বামী কলেজের গেইটের বাইরে বের হলে ৬/৭ জন যুবক তরুণীকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে নিয়ে এমসি কলেজ ছাত্রাবাস এলাকায় নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। এসময় তার স্বামী প্রতিবাদ করলে তাকে মারধর করা হয় বলে জানায় পুলিশ। খবর পেয়ে পুলিশ রাত সাড়ে ১০টার দিকে ওই তরুণীকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করা হয়। এদিকে ঘটনার পরই এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে ধর্ষণের এই ঘটনায় ছাত্রলীগের কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। পরে ওই ছাত্রাবাসে অভিযান চালিয়ে পাইপগান, চারটি রামদা, একটি ছুরি ও দুটি লোহার পাইপ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ঘটনায় ওই রাতেই শাহ পরান থানায় মামলা হয়। মামলায় এম সাইফুর রহমান, শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, তারেক আহমদ, অর্জুন লস্কর, রবিউল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমানের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরো কয়েকজনকে আসামি করা হয়। আসামিরা সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এ ঘটনায় আট ছাত্রলীগ কর্মীসহ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়। সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার আট ছাত্রলীগ কর্মীকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করছে পুলিশ। চার্জশিটে অভিযুক্ত আসামিরা হলেন- মামলার এজাহারভুক্ত আসামি সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার উমেদনগরের রফিকুল ইসলামের ছেলে তারেকুল ইসলাম তারেক (২৮), হবিগঞ্জ সদরের বাগুনীপাড়ার মো. জাহাঙ্গীর মিয়ার ছেলে শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রনি (২৫), জকিগঞ্জের আটগ্রামের কানু লস্করের ছেলে অর্জুন লস্কর (২৫), দিরাই উপজেলার বড়নগদীপুর (জগদল) গ্রামের বাসিন্দা ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ এমসি কলেজ শাখার সভাপতি রবিউল ইসলাম (২৫), কানাইঘাটের গাছবাড়ি গ্রামের মাহফুজুর রহমান মাসুম (২৫), মিসবাহ উর রহমান রাজন ও আইনুদ্দিন। এর মধ্যে রাজন ও আইনুদ্দিন ছাড়া অপর ছয়জন মামলার এজাহারভুক্ত আসামি।
গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল: গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়ন এলাকার ওই নারীর স্বামী তার সঙ্গে দেখা করতে তার বাবার বাড়ি একলাশপুর ইউনিয়নের জয়কৃষ্ণপুর গ্রামে আসেন। বিষয়টি দেখে ফেলেন স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী সন্ত্রাসী দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার ও তার লোকজন। এরপর রাত ১০টার দিকে দেলোয়ার তার লোকজন নিয়ে ওই নারীর ঘরে প্রবেশ করে তার স্বামীকে আরেকটি ঘরে আটক রেখে তাকে অনৈতিক প্রস্তাব দেয়। এতে রাজি না হওয়ায় ওই নারীকে নির্মমভাবে মারধর শুরু করে তারা। এক পর্যায়ে তাকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করে। ৪ অক্টোবর দুপুরে ওই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হলে দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এর আগেও আসামি আবুল কালামের সহযোগিতায় ওই গৃহবধূর বাড়ির পাশের বিলে নিয়ে নৌকার মধ্যে ধর্ষণ করে দেলোয়ার ও কালাম। ওই গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ওই রাতেই তিনি পুলিশের সহযোগিতায় বেগমগঞ্জ মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন এবং পর্নোগ্রাফি আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। এর দু’দিন পর দেলোয়ার ও কালামের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। রাতে ঘরে ঢুকে এক গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন ও এর ভিডিওচিত্র ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার মামলায় প্রধান আসামি দেলোয়ার হোসেন দেলুসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পিবি আই। গত ১৫ ডিসেম্বর দুপুরে পিবি আই চট্টগ্রাম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার মো. ইকবাল ও পিবি আই নোয়াখালী কার্যালয়ের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান মুন্সী নোয়াখালী চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট উৎপল চৌধুরীর আদালতে এ চার্জশিট দাখিল করেন। একই সঙ্গে চার্জশিটে গ্রেপ্তার আসামি রহমত উল্যা ও মাইন উদ্দিন শাহেদকে নির্যাতন ও ধর্ষণ মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। অভিযুক্ত ১৪ জনের মধ্যে দু’জন এখনো পলাতক রয়েছে। পিবি আই চট্টগ্রাম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার মো. ইকবাল জানান, অভিযুক্ত ১৪ জনের মধ্যে ১২ জন গ্রেফতার আছেন এবং দু’জন পলাতক। নির্যাতনের শিকার নারীর দায়ের করা নারী ও শিশু নির্যাতন, পর্নোগ্রাফি ও ধর্ষণ আইনে দায়ের করা মামলার প্রধান অভিযুক্ত বেগমগঞ্জের একলাশপুর এলাকার দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার হোসেন প্রকাশ দেলু, নূর হোসেন বাদল, আব্দুর রহিম, মোহম্মদ আলী প্রকাশ আবুল কালাম, সামছুদ্দিন সুমন প্রকাশ কন্ট্রাক্টর সুমন, ইস্রাফিল হোসেন মিয়া, মাইন উদ্দিন সাজু, নূর হোসেন রাসেল, আনোয়ার হোসেন সোহাগ, আব্দুর রব চৌধুরী প্রকাশ লম্বা চৌধুরী, মোস্তাফিজুর রহমান প্রকাশ আরিফ, মোয়াজ্জেম হোসেন সোহাগ প্রকাশ সোহাগ মেম্বার গ্রেপ্তার হয়ে নোয়াখালী জেলা কারাগারে রয়েছেন। আর এ মামলার আসামি জামাল উদ্দিন প্রকাশ প্রবাসী জামাল ও মিজানুর রহমান প্রকাশ তারেক পলাতক রয়েছে। এ ঘটনায় সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, চাঞ্চল্যকর গৃহবধূ নির্যাতন ও ধর্ষণ মামলায় ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় ৮ জন আসামি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *