বৈদেশিক সহায়তা বাজেট কমাল যুক্তরাজ্য
অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে দেওয়া বৈদেশিক সাহায্যের পরিমাণ কমানোর ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাজ্য। ২০১৫ সালে এক আইন করে জাতীয় আয়ের শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ বৈদেশিক সাহায্য হিসেবে খরচ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল দেশটি। কিন্তু গতকাল বুধবার মধ্যবর্তী বাজেট পর্যালোচনা বক্তব্যে চ্যান্সেলর ঋষি সুনাক জানান, ২০২০–২১ অর্থবছরে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহায়তা খাতে জাতীয় আয়ের শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ খরচ করবে যুক্তরাজ্য।
অর্থের হিসাবে এ বাজেট কর্তনের পরিমাণ প্রায় ৪ বিলিয়ন পাউন্ড, যা গত বছর খরচ হওয়া অর্থের চেয়ে প্রায় ২৯ শতাংশ কম। ২০১৯ সালে যুক্তরাজ্য বৈদেশিক সাহায্য খাতে ১৪ দশমিক ৬ বিলিয়ন পাউন্ড খরচ করে।
দেশটির তিনজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী জনসন সরকারের এমন সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন। আন্তর্জাতিক দাতব্য সংগঠনগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, এর ফলে বিশ্বের দারিদ্র্যপীড়িত জনগোষ্ঠীর লাখ লাখ মানুষের জীবন আরও ঝুঁকিতে পড়বে।
খ্রিষ্টধর্মীয় নেতা (আর্চবিশপ অব ক্যান্টারবারি) জাস্টিন ওয়েরবি সরকারের সিদ্ধান্তকে ‘লজ্জাজনক’ ও ‘ভুল’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। প্রতিমন্ত্রী ব্যারোনেস সাগ সরকারের এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে পদত্যাগ করেছেন। তাঁর মতে, বৈশ্বিক সংকটের এ সময়ে সরকারের এমন সিদ্ধান্ত ‘নজিরবিহীন’ ও ‘সম্পূর্ণ ভুল’।
ঋষি সুনাক বলেছেন, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে চলতি বছর যুক্তরাজ্যের বাজেট ঘাটতির পরিমাণ বেড়ে হবে ৩৫০ বিলিয়ন পাউন্ড। ঘাটতির এমন চাপ সামলাতে কেবল চলতি বছরের জন্য এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এ সহায়তার পরিমাণ আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়া হবে।
তবে সরকারি দলের এমপিদের কেউ কেউ বলছেন, সরকারের এ সিদ্ধান্ত কেবল চলতি বছরের জন্য বলে মনে হয় না। কারণ, ৩৫০ বিলিয়ন পাউন্ডের বাজেট ঘাটতি মোকাবিলায় বৈদেশিক সহায়তা খাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ তহবিল থেকে মাত্র ৪ বিলিয়ন পাউন্ড সাশ্রয় উল্লেখযোগ্য কিছু নয়। সরকার স্থায়ীভাবে বৈদেশিক সহায়তা কমিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট আইন সংশোধনের পরিকল্পনা করেছে বলেও খবর পাওয়া গেছে।
বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, জাতীয় পরিস্থিতি বিবেচনায় মন্ত্রী বৈদেশিক সহায়তা তহবিলের কম-বেশ করতে পারেন। তবে সেটা সাময়িক।
প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকা অবস্থায় যুক্তরাজ্যের দেওয়া বৈদেশিক সাহায্য নিয়ে নিজের অসন্তোষের কথা প্রকাশ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, কেবল সাহায্য হিসেবে নয়, যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় এ অর্থ ব্যয় করা উচিত। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি নিজের চাওয়া পূর্ণ করেছেন। চলতি বছরের জুন মাসে তিনি বৈদেশিক সহায়তা বিতরণে নিয়োজিত ‘আন্তর্জাতিক উন্নয়ন দপ্তর’–কে (ডিএফআইডি) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একীভূত করার ঘোষণা দেন। সেই ঘোষণা অনুযায়ী গত সেপ্টেম্বরে ডিএফআইডি বিলুপ্ত হয়।
আর পররাষ্ট্র ও কমনওয়েলথ দপ্তরের নাম বদলে হয় ‘পররাষ্ট্র, কমনওয়েলথ ও উন্নয়ন দপ্তর’।
‘পররাষ্ট্র, কমনওয়েলথ ও উন্নয়ন দপ্তর’–এর হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে বর্তমানে যুক্তরাজ্যের সহায়তায় স্বাস্থ্য, শিক্ষা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাসহ মোট ৪২টি প্রকল্প চালু রয়েছে। ২০২০–২১ অর্থবছরে এসব প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত বাজেট প্রায় ২১৬ মিলিয়ন পাউন্ড। ২০২১–২২ অর্থবছরের জন্য অঙ্কটি প্রায় ১০০ মিলিয়ন পাউন্ড। আর ২০২২–২৩ অর্থবছরের জন্য নির্ধারিত বাজেট মাত্র ৫০ মিলিয়ন পাউন্ড।
এখন বৈদেশিক সাহায্যের মোট বাজেট কমানোর ঘোষণা দেওয়ায় এমনিতে কমতির দিকে থাকা বাংলাদেশের জন্য নির্ধারিত বাজেট আরও কমতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।