অক্সফোর্ডের টিকা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা
যুক্তরাজ্যের অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে গত সপ্তাহে করোনার টিকা নিয়ে সুখবর শুনেছিল বিশ্ব। বলা হয়েছিল, টিকাটি পরীক্ষার শেষ ধাপে ব্যাপক কার্যকারিতা দেখিয়েছে। করোনা মহামারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এ টিকাটি নতুন আশা জাগিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের মডার্না, ফাইজার ও তাদের জার্মান সহযোগী বায়ো এন টেকের করোনার টিকার চেয়ে এটি কম দামে পাওয়ার পাশাপাশি সহজে সরবরাহের কথাও শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু এ টিকা ঘিরে এখন কিছু নেতিবাচক খবর আসতে শুরু করেছে। বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক সংবাদমাধ্যম অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার তথ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলে। টিকার কার্যকারিতার বিষয়টিকে কেন্দ্র করেই বেশির ভাগ প্রশ্ন তোলা হয়।
অ্যাস্ট্রাজেনেকা তাদের টিকা পরীক্ষার তিন ধরনের ফল জানায়। তারা বলে, টিকার মোট কার্যকারিতা হবে ৭০ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন কার্যকারিতা ৬২ শতাংশ আর সর্বোচ্চ কার্যকারিতা ৯০ শতাংশ। এ ফলাফলের কারণ হচ্ছে—টিকা পরীক্ষার সময় বিভিন্ন ধরনের ডোজ ভুল করে ব্যবহার করা হয়েছিল। টিকা পরীক্ষায় অংশ নেওয়া কিছু স্বেচ্ছাসেবীকে ভুল করে পরিকল্পনার চেয়ে অর্ধেক শক্তির ডোজ টিকা দেওয়া হয়। কিন্তু পরীক্ষার ফলাফলে ওই ভুল ডোজই ভালো ফলাফল দেখিয়েছে।
এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে, টিকার কিছু ডোজ পরিকল্পনার চেয়ে কম শক্তিশালী করে তৈরি করা হয়েছিল। এতে টিকা তৈরিতে ব্যবহৃত উপাদানও কম যুক্ত করা হয়েছিল। তাতেই একজন ব্যক্তিকে সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব হয়েছে।
বিবিসি জানিয়েছে, অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাটির মূলত দুটি ডোজ নিতে হয়। প্রথমবার টিকা নেওয়ার পর একমাস পরে বুস্টার বা ক্ষমতাবর্ধক হিসেবে আরেকটি ডোজ গ্রহণ করতে হয়। টিকা পরীক্ষার সময় অধিকাংশ স্বেচ্ছাসেবী নিয়মমাফিক দুটি ডোজই পেয়েছেন। কিছু স্বেচ্ছাসেবীর ক্ষেত্রে ভুল করে কম শক্তির ডোজ দেওয়া হয়। টিকা নিয়ন্ত্রকদের কাছে আগেই ওই ভুল স্বীকার করেছিলেন গবেষকেরা। তাঁরা আরও স্বেচ্ছাসেবী অন্তর্ভুক্ত করে টিকা পরীক্ষা চালিয়ে যেতে সম্মত হয়েছিলেন।
তবে শেষ পর্যন্ত টিকার নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এই ভুলের বিষয়টিতে কোনো প্রভাব ফেলেনি।
তিন হাজার স্বেচ্ছাসেবীকে এক ডোজের টিকা দেওয়ার চার সপ্তাহ পর অর্ধেক ডোজের আরেকটি টিকা দেওয়া হয়। তাঁদের ক্ষেত্রে টিকার কার্যকারিতা ৯০ শতাংশ পর্যন্ত দেখা যায়। অন্যদিকে নয় হাজার জনকে দুটি পূর্ণ ডোজের টিকা দেওয়ার পর তাঁদের ক্ষেত্রে ৬২ শতাংশ কার্যকারিতা দেখা গেছে।
অ্যাস্ট্রাজেনেকা দুটি পরীক্ষার ফলাফলই প্রকাশ করে। এর পাশাপাশি, কোভিড-১৯ থেকে সুরক্ষায় তাদের টিকার গড় কার্যকারিতা ৭০ শতাংশ বলে দাবি করে। এ ফলাফল নিয়েই অনেক বিশেষজ্ঞ প্রশ্ন তুলতে শুরু করেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য কর্মসূচির সহযোগী ফেলো ও টিকা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডেভিড সালিসবারি বলেন, দুটি পরীক্ষায় দুটি ভিন্ন ডোজের ফলাফলকে এক করে তুলে ধরা হচ্ছে, যা আসলে কোনোটিরই ফলাফল নয়। এ কারণে মানুষ এটা ধরতে পারছে না।
অ্যাস্ট্রাজেনেকা অবশ্য বলছে, এটা তাদের প্রাথমিক তথ্য। এটা চূড়ান্ত তথ্য নয়। এ কথাটি ফাইজার ও মডার্নার ক্ষেত্রেও খাটে।
টিকা প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের টিকা পরীক্ষায় সম্পূর্ণ ফল মেডিকেল জার্নালে প্রকাশ করে পর্যালোচনার জন্য দিতে হবে। ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে টিকার জরুরি অনুমোদন পেতে সম্পূর্ণ তথ্য পর্যালোচনার জন্য নিয়ন্ত্রকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের টিকা নিয়ন্ত্রক এফডিএ বলছে, কোভিডের কোনো টিকা গ্রহণযোগ্য হতে হলে তা কমপক্ষে ৫০ শতাংশ কার্যকর বলে প্রমাণ পেতে হবে। অ্যাস্ট্রাজেনেকা অবশ্য এই শর্ত পূরণ করে। তাদের সর্বনিম্ন টিকার ফল ৬২ শতাংশ।
বর্তমানে অক্সফোর্ডের গবেষকেরা কম ডোজের টিকা বেশি কার্যকর ফল দেখানোর বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করছেন।
অনেক বিশেষজ্ঞ অবশ্য অক্সফোর্ডের টিকার প্রশংসাও করছেন। ডোজের মাত্রা আলাদা হলেও টিকার গবেষণা প্রকৃত পরিকল্পনা অনুযায়ী এগিয়েছে।
ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক পিটার ওপেনশ বলেন, এখান থেকে একটা বার্তা পেতে পারি যে তিনটি সম্ভাবনাময় কোভিড টিকা শিগগিরই পেতে যাচ্ছি, যা জীবন বাঁচাতে সাহায্য করবে। তবে আমাদের চূড়ান্ত ও সম্পূর্ণ তথ্য পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে এবং নিয়ন্ত্রকেরা তা কীভাবে পর্যালোচনা করেন, তা দেখতে হবে। অক্সফোর্ডের টিকার কার্যকারিতা এমআরএনএ-টিকার চেয়ে কম দেখালেও আমাদের অপেক্ষা করে দেখতে হবে।