এথিস্ট এরা ম্যাগাজিনের ১৯ লেখকের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার মামলা

‘এথিস্ট এরা’ নামক এক ম্যাগাজিনের সম্পাদক ও সমস্ত লেখকদের বিরুদ্ধে ঢাকার জুডিশিয়াল আদালতে গতকাল একটি ধর্ম অবমাননার মামলা দায়ের করা হয়েছে। হৃদয় কাজী নামের এক হেফাজতের ইসলামীর কর্মী এই মামলাটি দায়ের করেন। এদিকে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এইকিনিয়ে এমন কুরুচিপূর্ণ ম্যাগাজিনের সম্পাদক ও লেখকদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে বলে জানা গেছে।

২০১৯ সাল থেকে শুরু হওয়া এই ম্যাগাজিনটি জনপ্রিয়তা এবং পাঠকদের চাহিদার প্রেক্ষিতে অনলাইনে যাত্রা শুরু করার ঠিক এক বছর পর থেকেই প্রিন্ট আকারে ম্যাগাজিন বের করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং সেটিও বহুল আলোচিত হয়। এদিকে হেফাজতে ইসলামের করা এই মামলার বিষয়ে জানার জন্য ডেইলি বাংলাদেশ ২৪ এর পক্ষ হতে এথিস্ট এরার সম্পাদক আনিকা হক মল্লিকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি আমাদের জানান যে, ‘‘আসলে আমাদের এই ম্যাগাজিনটি নতুন প্রজন্মের কাছে বেশ গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। আমরা বরাবরের মতোই আমাদের সকলের চিন্তা-ভাবনা, বর্তমান বাংলাদেশের রাজনীতিতে ধর্ম, ধর্মের নামে ভন্ডামি এবং ইসলামের আরোও কিছু খুটিনাটি বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করি। আর যে কারণেই হেফাজতে ইসলামের সমস্যা হয়ে দাড়ায়, কেননা এতে তো তাদের মুখোশ উন্মোচন হয়ে গিয়েছে।’’

মিস মল্লিকা আরোও বলেন ‘‘আমরা ভয় পাই না, কারণ আমাদের এই ব্লগটি শুরুর পর থেকেই এমন অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি। আপনারা এও জানেন যে আনসার আল ইসলাম থেকে শুরু করে বাংলাদেশের অনেক ইসলামী মৌলবাদী গোষ্ঠী-ই আমাদেরকে ধ্বংস করার জন্য অনেক ষড়যন্ত্র করেছে। বিভিন্ন সময়ে মামলা দিয়ে আমাদেরকে হয়রানি করা হয়েছে। আমাদের অনেক লেখক এবং ব্লগারদেরকে জেলেও যেতে হয়েছে। তাতে কি, আমরা পিছপা হবো না।’’

তবে এই মামলার আসামিদের সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি আমাদের জানান যে, ‘‘ দেখুন এখন আমরা বেশ খারাপ একটা সময় পার করছি। এখানে আমি একা হলে কোনও সমস্যা ছিলো না। কিন্তু তারা আমি সহ সর্বমোট ১৯ জন‘কে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন এবং যারা অনেকেই এখন বাংলাদেশে বসবাস করছেন। যাদের মধ্যে বিশেষ কয়েকজন ব্লগার হচ্ছেন এম ডি রাসেল মিয়া, ফারজানা ইসলাম, তানভীর আহমেদ, জনি চন্দ্র সাহা, কমল চন্দ্র দাস, পুজা সাহা, এম ডি আসিফ ইস্মলাম, এম ডি মারাজ মিয়া, এম ডি শাইম, এম আরিফুল হক , আল মাহফুজ, এম ডি জহিরুল ইসলাম, সহ আরোও অনেকে, যা ইতিমধ্যেই হেফাজতের কর্মিরা ফেসবুকে তাদের বিভিন্ন পেইজে প্রকাশ করে দিয়েছেন।‘‘

এদিকে ডেইলি বাংলাদেশ এর পক্ষ হতে  মামলার বাদী বা হেফাজতে ইসলামের কর্মী হৃদয় কাজীর সাথে কথা বললে তিনি আমাদের জানান যে, ‘‘আমি একজন সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের সন্তান এবং ইসলামী দর্শনে মনে প্রাণে গভীর ভাবে লালন পালন করি। আর তাই এথিস্ট এরা নামক যে ম্যাগাজিনটি তারা বের করেছে একটি জঘন্য গোনাহের কাজ করেছেন। ইসলামে এই অপরাধের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ছাড়া বিকল্প নেই। সেখানে আমাদের নবী রাসুলদের নিয়ে অনেক নোংরামি করা হয়েছে। সুতরাং আমি আমাদের প্রশাসনের কাছে তাদের সকলের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’’ তাছাড়া তিনি আরো বলেন যে, প্রশাসনের তরফ থেকে যদি কোনও ব্যবস্থা না নেওয়া হলে তারা নিজেরাই এর একটি ব্যবস্থা নেবন বলেও তিনি আমাদের জানান।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের টিমের সাথে ডেইলি বাংলাদেশের কথা হলে তারা জানান, ‘‘ভিন্নমতাদর্শীদের হত্যায় বিষয়টি নতুন নয়। কারণ আমাদের দেশে এর আগেও অনেক ব্লগারকে হত্যা করা হয়েছে। এবং অনেকেই দেশ ছেড়ে অন্য দেশে যেতে বাধ্য হয়েছেন।

তার মতে শুধু যে হেফাজতে ইসলামই এসব কার্যক্রমের সাথে জড়িত এমনটি নয়। তিনি মনে করেন, হেফাজতের মতোই আরো অনেকগুলো সংগঠন রয়েছে, যাদের মধ্যে আনসার আল ইসলাম অন্যতম। তবে আমাদের তরফ থেকে আমরা বেশ সচেতন রয়েছি, এবং লক্ষ রাখছি যাতে করে যেন কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে। এবং হেফাজদের দায়ের করা মামলাটির বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও তিনি আমাদের জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *