বিশ্ব বদলাতে চেয়ে বদলে গেলেন নিজেই

ওরা সবাই তখন টগবগে তরুণ। জীবন গড়ার স্বপ্নে বিভোর। জীবন গতিপথের ছক এঁকে বসে আছেন- কে কী করবেন। কেউ ডাক্তার, কেউ প্রযুক্তিবিদ কিংবা অন্য কোনো পেশায় সাজাবেন নিজের আগামী।

দেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে কেউবা বিশ্বকে বদলে দেওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু কিছুই হয়নি। নিষ্ঠুর নিয়তি, অশান্তিপ্রিয় সিরীয় সরকার সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। তাদের স্বপ্ন এখন যেন দুঃস্বপ্নের জ্বলজ্বলে স্মৃতি।

যুদ্ধের ১০ বছর স্মরণে (সোমবার, ১৫ মার্চ) সর্বহারা কয়েকজন সিরিয় নাগরিকের স্মৃতিকথা উঠে আসে এএফপি প্রতিবেদনে।

তাদেরই একজন দিমা আল-কায়েদ। যুদ্ধের ভয়াবহতা এড়াতে বাড়ি বিক্রি করে সপরিবারে দামেস্ক ছেড়ে চলে যান ইরাকের কুর্দিস্তানে।

সেখানেই এখন তাদের জীবনযাপন। গ্রাজুয়েশন শেষ করা দিমা বললেন, ‘আমি বিশ্বকে বদলানোর স্বপ্ন দেখেছিলাম। সেটা বিসর্জন দিয়ে তাগিদ এলো নিজেকে বাঁচানোর, নিজেকে বদলানোর। আমি নিজেকে বদলে ফেললাম। নির্বাসিত জীবন কখনো কখনো কঠিন ছিল। এখন সব ঠিক হয়ে গেছে।’

সিরিয়ায় এক দশকের গৃহযুদ্ধে বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। কেউ পা হারিয়েছেন, কেউ বা হাত। বহু নিরীহ নাগরিকের জীবন হয়েছে বিপর্যস্ত, বিধ্বস্ত, বিপন্ন। এক আনুমানিক জরিপের হিসাব অনুযায়ী এই যুদ্ধে মারা গেছেন তিন লাখ ৮৭ হাজার মানুষ। উদ্বাস্তু পরিচয়ে বেঁচে আছেন আরও কয়েক লাখ।

সামির সাওয়ানের বয়স তখন ২৩। লাটাকিয়া সমুদ্র সৈকতের পাশ দিয়ে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিলেন। সেনাদের গুলি এসে তার গাড়িতে। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়িটি গড়িয়ে যায় বহুদূর। ৩৩ বছর বয়সে এসে সে ঘটনা বর্ণনা করলেন।

পুরোটা মনে করতে পারলেন না। শুধু বললেন, ‘আমি প্যারালাইজড। আমার আগের সে স্বপ্ন, উচ্চাকাক্সক্ষা- কিছুই নেই। চিরপঙ্গুত্ব বরণ করে এখন আমি মৃত্যুর প্রহর গুনছি।’

জাতিসংঘ জানিয়েছে, সিরিয়ায় যুদ্ধের কারণে প্রায় ১৫ লাখ লোক প্রতিবন্ধী হয়ে পড়েছেন।

ইদলিবের সর্বশেষ বিদ্রোহী ঘাঁটিতে বসেছিলেন পা হারানো ২৯ বছর বয়সি বাকরি আল-দেবস। তিনি বিদ্রূপের সুরে বললেন, ‘কৃত্রিম পা-ই এখন আমাকে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখায়।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *