আন্তর্জাতিক নারী দিবস আজ
শুধু ঘরের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, কুসংস্কার ভেঙে বেরিয়ে আসছে নারী। তারা সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অনেক এগিয়েছে। নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষা, অর্থনীতি, রাজনীতি এবং চাকরিতেও বাড়ছে সক্রিয় অংশগ্রহণ। এমনকি সামরিক বাহিনী এবং সাংবাদিকতার মতো চ্যালেঞ্জিং পেশায়ও বাড়ছে তাদের উপস্থিতি। এরপরও নারীর অগ্রযাত্রায় আছে বিশাল চ্যালেঞ্জ। সবচেয়ে বড় সমস্যা নিরাপত্তাহীনতা। অনেক জায়গায়ই এখনো নারীর কাজের মতো উপযুক্ত পরিবেশ নেই। অর্থনীতিতে নারীর অবদানের স্বীকৃতিও মিলছে না। ধর্ষণ এবং হত্যার মতো ঘটনা ঘটছে। আগের তুলনায় নির্যাতনের ক্ষেত্রে সচেতনতা বেড়েছে, তবে বন্ধ হয়নি। যৌতুকের প্রবণতা কমলেও সহনীয় মাত্রায় আসেনি। এসব চ্যালেঞ্জ নিয়েই আজ বিশ্বনারী দিবস পালিত হচ্ছে। এবারের নারী দিবসের প্রতিবাদ্য বিষয়-‘করোনাকালে নারী নেতৃত্ব, গড়বে নতুন সমতার বিশ্ব।’ দিবসটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নারীর অগ্রযাত্রায় রাষ্ট্র ও সমাজকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, জনসংখ্যার ৫০ শতাংশই নারীকে বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। এ কারণে নারীর অবদানও সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। অর্থনীতিতে অবদান বাড়ানোর জন্য কর্মক্ষেত্রে নারীর জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি। তবে ব্যতিক্রম রয়েছে। হয়রানির জন্য নারীদের দিয়ে মামলা করানোর ঘটনাও একেবারে কম।
নব্বইয়ের দশক থেকে বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এখনো এ ধারা অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয়, জাতীয় সংসদের স্পিকার নারী। সংসদে নারীদের জন্য ৫০টি সংরক্ষিত আসন রয়েছে। বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে শীর্ষপদে আছেন নারীরা। তবে তাদের অবদানের স্বীকৃতি নেই অনেক খাতে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের তথ্য অনুসারে নারীর অর্থনৈতিক অনেক কাজের স্বীকৃতি নেই। বর্তমানে নারী যে কাজ করে, তার মাত্র চার ভাগের এক ভাগ জাতীয় আয়ে যোগ হয়। একজন নারী প্রতিদিন গড়ে ১২ দশমিক ১টি কাজ করে, যা জাতীয় আয়ে যোগ হয় না। এসব কাজের বার্ষিক মূল্য মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রায় ৮৭ দশমিক ১ শতাংশের সমান।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন রোববার যুগান্তরকে বলেন, কর্মক্ষেত্রে নারীরা অনেক এগিয়েছে। ’৭০-এর দশকে যেখানে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ মাত্র ৪ শতাংশ ছিল, এখন সেটা ৩৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। তারপরও অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, নারীবান্ধব অনেক আইন আছে, কিন্তু সেগুলোর প্রয়োগ নেই। অনেক নারী নিজের একাগ্রতার কারণে ব্যবসা ক্ষেত্রে সফল হলেও বেশির ভাগ ঝরে পড়ছে বাজার ব্যবস্থাপনা, অর্থের অভাব ও প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মেলাতে না পেরে। তিনি বলেন, নারীদের জন্য প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে অনেক কর্মজীবী নারী ঝরে পড়বে। বিশেষত বর্তমানে পোশাক শিল্পে প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পারলে নারীর অনেক বড় একটি অংশ ছিটকে পড়বে। উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্য বিপণনে আলাদা বাজার কাঠামো দাঁড় করাতে হবে। আর কর্মজীবী নারীদের বাচ্চাদের দেখাশোনার জন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ভালোমানের ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন করতে হবে। তাহলে অর্থনীতিতে নারীর অবদান আরও বাড়বে।
জানা গেছে, নারী নির্যাতন রোধে গত দুই দশকে সচেতনতা বেড়েছে। আইন সংশোধন করে ২০২০ সালে ধর্ষণ মামলায় সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড করা হয়েছে। এতে অপরাধ কমেনি। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদসহ বিভিন্ন এনজিও সংগঠনের তথ্য অনুযায়ী- ২০২০ সালের ১৪ অক্টোবর থেকে একই বছরের ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত ১২৭ নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে।