অর্ধেকের বেশি প্রার্থীই পেরোতে পারেননি মাধ্যমিকের গণ্ডি
মুন্সীগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে নয়টি ওয়ার্ডে ৫৩ জন কাউন্সিলর প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ হয়েছে। এসব প্রার্থীর মধ্যে ২৮ জন এসএসসি পাস করতে পারেনি। প্রত্যেক ওয়ার্ডে একাডেমিক শিক্ষা নেই এমন প্রার্থীও আছেন। এসএসসি পাস করতে পারেননি এমন প্রার্থীদের মধ্যে, স্বশিক্ষিত ৯ জন, সাক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন ৪ জন, অষ্টম শ্রেণি ১১ জন, নবম শ্রেণি ২ জন, পঞ্চম শ্রেণি পাস আছেন ২ জন। ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কোন প্রার্থীই এসএসসি পাস করতে পারেননি। একাডেমিকভাবে শিক্ষিত না হয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হিসেবে জনগণের সেবায় কতটুকু ভূমিকা রাখতে পারবেন তা নিয়ে প্রশ্ন ভোটারদের।
হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বাকি কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে এসএসসি ৭ জন, এইচএসসি ৪ জন, এলএলবি ৪ জন, স্নাতক ৩ জন, বিএসএস ২ জন, এমএসএস একজন, এমএ একজন, এমবিএ একজন, বিবিএ একজন, এলএমএম একজন রয়েছেন।
ভোটাররা বলছেন, পৌরসভার উন্নয়নে দরকার একাডেমিক শিক্ষিত কাউন্সিলর। যার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রার্থী বাছাইয়ে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ভোটাররা। কেউ কেউ আবার আইন করে শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করে দেওয়ার দাবিও জানিয়েছেন। অধিকাংশ কাউন্সিলর প্রার্থী যদি একাডেমিকভাবে শিক্ষিত না হন, তা দুঃশ্চিন্তার বিষয় বলে মনে করছেন পৌর এলাকার বাসিন্দারা।
এক নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী ৮ জনের শিক্ষাগত যোগ্যতা: মো. হিরণ শিক্ষাগত যোগ্যতা হলফনামায় উল্লেখ করেছেন ৫ম শ্রেণি, ফরহাদ হোসেন আবির এসএসসি, মো. খাইরুল ইসলাম অষ্টম শ্রেণি, মো. মিরাজুল ইসলাম মিরাজ স্নাতক, মো. মনির হোসেন এইচএসসি, মো. মজিবুর রহমান খোকা অষ্টম শ্রেণি, মো. নাহিদ হাসান- এলএলএম (মাস্টার্স) ও তোফায়েল আহমেদ স্নাতক।
২ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী ৯ জনের শিক্ষাগত যোগ্যতা: হলফনামায় শিক্ষাগত যোগ্যতা উল্লেখ করেছেন এসএম আরিফ এসএসসি, মু. সোহেল রানা স্নাতকোত্তর, মো. আব্দুল মান্নান দর্পন এসএসসি, মো. হুমায়ন কবির এলএলবি, আবু জাফর সাইফুল বিন সামাদ শুভ্র এইচএসসি, এসএম মশিউর রহমান এলএলবি, আব্দুর রহমান ৮ম শ্রেণি, মুহাম্মদ মাহবুব আলম এইচএসসি ও মো. জুয়েল রানা বিএসএস।
৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী ৩ জনের শিক্ষাগত যোগ্যতা: মকবুল হোসেন এসএসসি, আব্দুর মামুন পঞ্চম শ্রেণি, মো. আনোয়ার হোসেন স্বশিক্ষিত।
৪ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী ৪ জনের শিক্ষাগত যোগ্যতা: আলি আকবর চায়না স্বশিক্ষিত, মাহবুব রশীদ এলএলবি, আনোয়ার হোসেন স্বশিক্ষিত ও মিলন হাওলদার ৮ম শ্রেণি।
৫ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী ৪ জনের শিক্ষাগত যোগ্যতা: মনির হোসেন নবম শ্রেণি, মতিউর রহমান স্বপন অষ্টম শ্রেণি, সাইদ আকতার স্বশিক্ষিত, মো. দীন ইসলাম অষ্টম শ্রেণি।
৬ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী ৬ জনের শিক্ষাগত যোগ্যতা: পান্নু গাজী অষ্টম শ্রেণি, মো. আওলাদ হোসেন এইচএসসি, আবু সাত্তার মুন্সী এমএসএস, গাজী মশিউর রহমান অষ্টম শ্রেণি, মজিবুর রহমান শেখ এলএলবি, শহিদুল ইসলাম লিটন অষ্টম শ্রেণি।
৭ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী ৯ জনের শিক্ষাগত যোগ্যতা: মোহাম্মদ স্বপন অষ্টম শ্রেণি, মো. হোসেন অপি স্বশিক্ষিত, সুলতান বেপারি স্বাক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন, মো. শফিকুল হাসান এমএ, কামাল সরকার এসএসসি, রাজিব হোসেন বাবু নবম শ্রেনি, মোহাম্মদ আওলাদ হোসেন এমবিএ, মো. আফজাল হক সাক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন, আবু সুফিয়ান সাক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন।
৮ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী ৬ জনের শিক্ষাগত যোগ্যতা: মো. আওলাদ হোসেন স্বশিক্ষিত, মোসতাক ভূঁইয়া অষ্টম শ্রেণি, জুনায়েদ মিয়া স্বশিক্ষিত, শাহাবুদ্দিন নিজাম স্বশিক্ষিত, মো. সাদ্দাম হোসেন স্বশিক্ষিত, মো. হাবিব ই আলম বিএসএস।
৯ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী ৪ জনের শিক্ষাগত যোগ্যতা: মো. মোশারফ হোসেন সাক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন, মো. সাজ্জাদ হোসেন বিবিএ, মো. আশরাফ হোসেন এসএসসি ও জাকির হোসেন এসএসসি।
সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সদস্য শহীদ-ই-হাসান তুহিন জানান, পৌরসভার নাগরিকদের প্রতিনিধিত্ব করে থাকেন কাউন্সিলররা। জনপ্রতিনিধিরা ভালো শিক্ষিত না হলে উন্নয়নকাজ ব্যাহত হবে। বিভিন্ন হিসাবনিকাশ ও টেকনিক্যাল জ্ঞান থাকা জরুরি। এর জন্য একাডেমিক শিক্ষা প্রয়োজন। পৌরসভার অর্ধেকের বেশি প্রার্থী এসএসসি পাস করতে পারেননি। যার কারণে পৌর এলাকার বাসিন্দারা বিভিন্ন সেবা থেকে বঞ্চিত হবে।
পৌরসভার বাসিন্দা শিক্ষক মো. আসাদুজ্জামান বলেন, স্থানীয় সরকারের অধীনে যখন উন্নয়নমূলক কাজ হয় তখন আমাদের মেয়র থেকে পৌর কাউন্সিলরদের একাডেমিক শিক্ষা থাকা জরুরি। বিভিন্ন সংস্থার কাছে উন্নয়ন কাজের জন্য প্রস্তাব দিতে হয়। শুধু যে সরকারের বাজেট থেকে কাজ হয় তা নয়। এছাড়া পৌরসভাতে উন্নয়নমূলক কাজের জন্য আন্তর্জাতিক অনুদানও আসে। এসবের জন্য একাডেমিক শিক্ষা থাকতে হয়। কেননা বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার জন্যও শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা আবশ্যক। এর অভাবে উন্নয়ন কাজ বাধাগ্রস্ত হবে।
পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা এবং সরকারি হরগঙ্গা কলেজের মাস্টার্সের ছাত্র মো. আসাদুজ্জামান মিরাজ বলেন, জনপ্রতিনিধি যারা হবেন, তাদের শিক্ষিত হওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে সরকারকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সরকার একটি শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করে দিলে এ সমস্যার সহজ সমাধান হয়ে যায়। তখন কম শিক্ষিত লোকজনের মেয়র বা কাউন্সিলর পদে দাঁড়ানোর সুযোগ থাকবে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পৌর কাউন্সিলর প্রার্থী জানান, স্কুল-কলেজের শিক্ষাই শুধু শিক্ষা নয়; বাস্তব অভিজ্ঞতা বা দক্ষতা দিয়ে এ পৃথিবীকে বহু মানুষ আলোকিত করেছেন। এর হাজারো প্রমাণ আছে।
শনিবার (৩০ জানুয়ারি) মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এরই মধ্যে ১৩ কাউিন্সল প্রার্থী সরে দাঁড়িয়েছন। তাই মূল ভোট লড়াইয়ে অংশ নিচ্ছেন ৪০ জন। নারী কাউন্সিল প্রার্থী ৯ জন এবং মেয়র পদে ৫ জন লড়ছেন। ২৫ কেন্দ্রে ভোটাধিকারের সুযোগ থাকছে ৫৩ হাজার ৩৭৪ ভোটারের। নিরাপত্তা জোরদার করা হয়ছে। মাঠে নেমেছে বিজিবি।