এথিস্ট ইন বাংলাদেশের সকল ব্লগারের নামে হেফাজতে ইসলামের মামলা দায়ের।

নিজস্ব প্রতিনিধি: দেশ ও দেশের বাইরে থাকা বাংলাদেশী কয়েকজন ব্লগারের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার মামলা করেছেন আরিফ উদ্দিন নামে হেফাজতে ইসলামের একজন কর্মি। জানা যায়, ব্রিটেনে বসবাসরত আরমান আহমেদ নামে একজন বাংলাদেশি এবং তার কিছু সহপাঠীদের নিয়ে ২০১৬ সালে মুক্তমনাদের জন্য  ‘‘এথিস্ট ইন বাংলাদেশ’’ নামে একটি বিশেষ ব্লগ বা ওয়েবসাই তৈরি করেন। তবে ব্লগটি খুব কম সময়ের মধ্যেই বেশ জনপ্রিয়তাও লাভ করেছে বলে অনেকেই মনে করেন।

২০১৬ সাল থেকে শুরু হওয়া এই ব্লগটি তাঁর জনপ্রিয়তা এবং পাঠকদের চাহিদার প্রেক্ষিতে অনলাইনে যাত্রা শুরু করার ঠিক এক বছর পর থেকেই প্রিন্ট আকারে ম্যাগাজিন বের করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং সেটিও বহুল আলোচিত হয় বলে ফেসবুকে অনেকের পোস্ট এবং মন্তব্য দেখে বোঝা যায়।

এদিকে হেফাজতে ইসলামের করা এই মামলার বিষয়ে জানার জন্য ডেইলি বাংলাদেশ ২৪ এর পক্ষ হতে এথিস্ট ইন বাংলাদেশের এডিটর আরমান আহমেদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি আমাদের জানান যে, ‘‘আসলে আমাদের এই ব্লগটি নতুন প্রজন্মের কাছে বেশ গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। আর তারই ধারাবাহীকতায় এথিস্ট ইন বাংলাদেশ বিগত সংখ্যাগুলোর মতো এবারো একটি ম্যাগাজিন প্রেকাশ করে, যেটি ‘সব ত্যাগ গরুতে?‘ শিরোনামে প্রকাশিত হয়। এটি মূলত জানুয়ারি – জুন ২০১৯ এর ৪র্থ বর্ষের সপ্তম সংখ্যা। এই সংখ্যাতেও আমরা বরাবরের মতোই আমাদের সকলের চিন্তা-ভাবনা, বর্তমান বাংলাদেশের রাজনীতিতে ধর্ম, ধর্মের নামে ভন্ডামি এবং ইসলামের আরোও কিছু খুটিনাটি বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করি। আর যে কারণেই হেফাজতে ইসলামের সমস্যা হয়ে দাড়ায়, কেননা এতে তো তাদের মুখোশ উন্মোচন হয়ে গিয়েছে।’’

আরমান আহমেদ আরোও বলেন ‘‘আমরা ভয় পাই না, কারণ আমাদের এই ব্লগটি শুরুর পর থেকেই এমন অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি। আপনারা এও জানেন যে আনসার আল ইসলাম থেকে শুরু করে বাংলাদেশের অনেক ইসলামী মৌলবাদী গোষ্ঠী-ই আমাদেরকে ধ্বংস করার জন্য অনেক ষড়যন্ত্র করেছে। বিভিন্ন সময়ে মামলা দিয়ে আমাদেরকে হয়রানি করা হয়েছে। আমাদের অনেক লেখক এবং ব্লগারদেরকে জেলেও যেতে হয়েছে। তাতে কি, আমরা পিছপা হবো না।’’

তবে এই মামলার আসামিদের সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি আমাদের জানান যে, ‘‘ দেখুন এখন আমরা বেশ খারাপ একটা সময় পার করছি। এখানে আমি একা হলে কোনও সমস্যা ছিলো না। কিন্তু তারা আমি সহ সর্বমোট ৬১ জন‘কে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন এবং যারা অনেকেই এখন বাংলাদেশে বসবাস করছেন। যাদের মধ্যে বিশেষ কয়েকজন ব্লগার হচ্ছেন তানভীর আহমেদ, আবু হানিফ, কে এম মাহফুজুর রহমান, আমিনুল হক, কাজী ওয়াহিদুজ্জামান, এমডি মাহাদি হাসান, প্রশান্ত বারই, জোবায়ের হোসেন, শ্রাবণী শিকদার, বিপ্লব পাল এবং এইচ এম মাহমুদ সহ আরোও অনেকে, যা ইতিমধ্যেই হেফাজতের কর্মিরা ফেসবুকে তাদের বিভিন্ন পেইজে প্রকাশ করে দিয়েছেন।‘‘

এদিকে ডেইলি বাংলাদেশ এর পক্ষ হতে  মামলার বাদী বা হেফাজতে ইসলামের কর্মী আরিফ উদ্দিনের সাথে কথা বললে তিনি আমাদের জানান যে, ‘‘আমি একজন সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের সন্তান এবং ইসলামী দর্শনে মনে প্রাণে গভীর ভাবে লালন পালন করি। আর তাই এথিস্ট ইন বাংলাদেশ নামক যে ম্যাগাজিনটি তারা বের করেছে একটি জঘন্য গোনাহের কাজ করেছেন। ইসলামে এই অপরাধের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ছাড়া বিকল্প নেই। সেখানে আমাদের নবী রাসুলদের নিয়ে অনেক নোংরামি করা হয়েছে। সুতরাং আমি আমাদের প্রশাসনের কাছে তাদের সকলের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’’ তাছাড়া তিনি আরো বলেন যে, প্রশাসনের তরফ থেকে যদি কোনও ব্যবস্থা না নেওয়া হলে তারা নিজেরাই এর একটি ব্যবস্থা নেবন বলেও তিনি আমাদের জানান।

কোন কোন লেখা এবং লেখকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে জানতে চাইলে আরিফ উদ্দিন আমাদের জানন যে, ‘‘দেখুন এই এথিস্ট ইন বাংলাদেশটি একটি নাস্তিক সংগঠন, এই সাইটে এবং ম্যাগাজিনে যারাই লিখে এরা সবাই নাস্তিক। এরা দীর্ঘদিন ধরেই ইসলাম এবং আমাদের প্রাণ প্রিয় নবীজিকে নানা ধরনের মিথ্যাচার এবং কটুক্তি করে আসছে। এদের মধ্যে কয়েকজন লেখক এবং তাদের লেখাগুলো হলো:- কাজী ওয়াহিদুজ্জামানের ‘‘সব ত্যাগ কি গরুতে‘‘, এমডি মাহাদি হাসান লিখেছেন ‘‘আল্লাহ্ বলতে কিছুই নাই, সবই মুহাম্মদের তৈরি‘‘, কে এম মাহফুজুর রহমানের ‘‘ইসলাম সহিংসতায় বিশ্বাস করে না, কিন্তু কোরআন করে‘‘, এমডি আমিনুল হক লিখেছেন ‘‘আস্তিকের কোরবানি প্রথা এবং নাস্তিকের মাংস খাওয়া‘‘, সম্পাদক আরমান আহমেদ লিখেছেন ‘‘কোরানের কিছু ভুল এবং আজকের বিজ্ঞান‘‘, কামরুন নাহার শাহানার ‘‘ ধর্মীয় অনুশাসনে চলা মেয়েরা আপনারা তো খাদিজা কিংবা আয়েশা‘‘, জোবায়ের হোসেন লিখেছেন ‘‘ধর্মের বিরুদ্ধে ডাকা আন্দোলন ও সংগ্রাম চলবে‘‘, জিয়াউল হক ‘‘সকল ধর্মই ভূয়া, কাল্পনিক, মানুষের তৈরি‘‘, তানজিলা তাজ রিসা লিখেছেন ‘‘কেন আমি ইসলাম ছেড়েছি‘‘ সহ এই ধরনের আরোও অনেক লেখা লিখে মুসলমানদের মধ্যে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে, আমাদের কলিজা নবীজিকে নিয়ে অনেক অনেক কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছে যা আমি একজন মুসলিম হিসেবে কোনও ভাবেই মেনে নিতে পারিনি, তাই তাদের সকলের নামে মামলা দায়ের করেছি।

এই মামলার প্রধান আসামী সম্পাদক আরমান আহমেদ। মামলার অন্য আসামীরা হলেন- তানভীর আহমেদ, কেএম মাহফুজুর রহমান, আমিনুল হক, কাজী অওাহিদুজ্জামান, প্রশান্ত বাড়ই, আদনান সাকিব, এমডি ওমর ফারুক, সেক্যুলার পাবলিশার্স, মোহাম্মদ ওমর সানী, শ্রাবণী শিকদার, হায়াত হামিদুল্লা রবিন, এম ডি তোফায়েল হোসেন, হোসনি মোবারক, সানজিদা সামিরা তামান্না, রুমন মিয়া, ফারজানা ইসলাম, রুমানা আফরোজ রাখি, মোহাম্মদ এমাদ, বিপ্লব পাল, আনিকা হক মল্লিক, এমডি মিজানুর রহমান খন্দকার, অরুনাংশ চক্রবর্তী, আসিফ আবড়ার টিটু, সাইফুল ইসলাম, রাশেদুল আলম, চিন্ময় দেবনাথ, জোবায়ের হোসেন, এমডি আনিছুজ্জামান, মিফতাহুর রহমান, আব্দুর রহমান, এমডি সাব্বির আহমেদ, এনামুল হক, শামাউন সরকার, কামরুন্নাহার শাহানা, সৈয়দ মাসুন আলী, শিপন আহমেদ, সুলতানুল আরেফিন সিয়াম, আব্দুল্লাহ বাকি, এহসানুল করিম, আবুল হানিফ, এমডি মাহাদি হোসেন, এমডি রেজাউল ইসলাম, কাওসার হামিদ, ডলার বিশ্বাস, নিলুফার হক, হাফিজুর রহমান, সিদ্দিকুর রহমান, শাহ্নাজ ফেরদৌসি, এমডি লায়েক মিয়া, এমডি মনোয়ার হোসেন, নাইমুল ইসলাম, আব্দুল জলিল, এমডি খালেদ হোসেন, কাশিফ রেহান, রুবেল চৌধুরী, শেখ রিপন, এইচ এম মাহমুদ, সুজন চন্দ্র দেব, এফ এম জাকির হোসেন জ্যাকি, এমডি মনোয়ার হোসেন।

মামলাটির নম্বর ১৪৫৭/২০১৯। আদালত মামলার অনুসন্ধানী রিপোর্ট জমা দেয়ার জন্যে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন বলে আদালত সূত্রে জানা যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *