ম্যারাডোনার খেলা উপভোগের স্মৃতি
ফুটবলের কিংবদন্তি খেলোয়াড় ডিয়েগো ম্যারাডোনা যেন তারকাদের তারকা। বিশ্বব্যাপী ভক্তরা তাঁর প্রয়াণে মর্মাহত। ভক্তদের সেই দলে আছেন বাংলাদেশের টেলিভিশন ও সিনেমা অঙ্গনের অনেক তারকা। কেবল ম্যারাডোনার জন্য আর্জেন্টিনা নামের দেশটিকে সমর্থন করেছেন তাঁদের অনেকে। ম্যারাডোনার খেলার ভক্ত হিসেবে তাঁর প্রয়াণে স্মৃতিচারণা করেছেন বাংলাদেশের অভিনয়জগতের তারকারা।
তাঁর খেলা উৎসবের মতো
কবরী, অভিনেত্রী ও পরিচালক
বুঝে না বুঝেই আমি ফুটবল খেলাটা দেখতাম। ক্রিকেটও পছন্দ করি, কিন্তু ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা অন্য রকম। রাত জেগে জেগে বিশ্বকাপ দেখতাম, বিশেষ করে ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপ। ওই সময় সিনেমা নিয়ে আমি খুব ব্যস্ত। কিন্তু ম্যারাডোনার খেলা হলেই শুটিং বন্ধ করে দিতাম। ভাইবোনেরা মিলে একসঙ্গে বসে খেলা দেখতাম। আমরা তখন উত্তরায় থাকি। তাঁর খেলা চলাকালে পরিবেশ ছিল একদম উৎসবের মতো। কত রকম খাওয়াদাওয়া হতো। ম্যারাডোনাকে অনেক পছন্দ করতাম। তাঁর খেলা এত ভালো লাগত, এত ‘নাটু’, কিন্তু চোখের পলকে বল পাস করত। এটাই তাঁর বাহাদুরি ছিল। ম্যারাডোনার ক্যারিশমাটিক একটা ব্যাপার আছে।
তিনি একাই দলকে সাহস জুগিয়েছিলেন
তারিক আনাম খান, অভিনেতা
ম্যারাডোনার খেলা মানেই সবাই একসঙ্গে বসে দেখা। ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপ এখনো ম্যারাডোনাকে স্মরণ করিয়ে দেয়। পরে কত রাত জেগে তাঁর খেলা দেখেছি। হঠাৎ তাঁর চলে যাওয়ায় খারাপ লেগেছে। আর্জেন্টিনার মতো একটি দেশ থেকে ম্যারাডোনা তাঁর দলকে একেবারে তুঙ্গে পৌঁছে দিয়েছিলেন। তাঁরা একদল তরুণ, ফুটবলকে নিয়ে গিয়েছিলেন অন্য এক উচ্চতায়। ম্যারাডোনা একাই দলকে সাহস জুগিয়েছিলেন। তিনি যেন ছিলেন একাই এক শ। তবে তাঁর উচ্ছৃঙ্খল জীবনটা মেনে নিতে কষ্ট হয়েছে।
অফফিল্ডে তিনি ড্রামাটিক, অনফিল্ডেও
সুবর্ণা মুস্তাফা, অভিনেতা
ম্যারাডোনার খেলা সম্ভবত প্রথম দেখি ১৯৮২ সালের বিশ্বকাপে। তাঁর ড্রিবলিং, পাস, বল নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার কৌশল—জাস্ট ম্যাজিক। আমরা ভাগ্যবান, ম্যারাডোনার খেলা দেখেছি। যাঁরা দেখেনি, হয়তো ইউটিউবে দেখবে। মিডফিল্ডের আগে থেকে গোলরক্ষকসহ নয়জনকে কাটিয়ে গোল দেওয়া সেই ম্যারাডোনা আমার কাছে অবিশ্বাস্য। অনেকে তাঁর খেলা-পরবর্তী জীবন নিয়ে কথা বলছেন, এগুলো বাতুলতা। এসব কখনোই তাঁর খেলোয়াড়ি জীবনকে ছোট করে না। অফফিল্ডে তিনি ড্রামাটিক, অনফিল্ডেও। তিনি হচ্ছে আমার দেখা সেরাদের সেরা।
ম্যারাডোনার কারণে যুদ্ধেও আর্জেন্টিনার পক্ষে
জাহিদ হাসান, অভিনেতা
বেড়ে ওঠার সময় থেকেই ম্যারাডোনার খেলার সঙ্গে আমার পরিচয়। ম্যারাডোনার কারণেই আমরা জেনেছিলাম, আর্জেন্টিনা নামে একটি দেশ আছে। যে নৈপুণ্য ম্যারাডোনার খেলায় দেখেছি, সে কারণেই হয়তো রাত জেগে বিশ্বকাপ দেখতাম। খেলার সময় বিদ্যুৎ চলে গেলেও টিভির সামনে থেকে সরতাম না। বুধবার রাতে যখন ছেলের কাছে শুনলাম, ম্যারাডোনা বেঁচে নেই, খুব কষ্ট পেয়েছি। তাঁর সেই জাদুকরি গোল এখনো আমার চোখে ভাসে। একবার আর্জেন্টিনার সঙ্গে কোনো এক দেশের যুদ্ধ বাধে। ম্যারাডোনার কারণে সেই যুদ্ধেও আমি আর্জেন্টিনার পক্ষে ছিলাম।
চেয়ারম্যানবাড়ির উঠানে বিশ্বকাপ ফুটবল
চঞ্চল চৌধুরী, অভিনেতা
আমাদের গ্রামে একমাত্র চেয়ারম্যানের বাড়িতেই ছিল একটি সাদাকালো টেলিভিশন। তখনো গ্রামে বিদ্যুতের আলো পৌঁছায়নি। চেয়ারম্যানবাড়ির উঠানে রাত জেগে ব্যাটারিচালিত সাদাকালো ওই টেলিভিশনে আমরা বিশ্বকাপ ফুটবল দেখেছিলাম। সেই স্মৃতি মনে পড়ে গেল। আমাদের কৈশোর, স্কুলজীবনে মিশে ছিল যে নামটি, সেটা ম্যারাডোনা। তিনি পরপারে চলে গেছেন জানার পর খুব বেশি করে ফিরে যাচ্ছি অতীতে। ম্যারাডোনার ছবিওয়ালা খাতায় লিখতে লিখতে আমার স্কুলজীবন পার করা।
আমি আর নাঈম একসঙ্গে খেলা দেখেছি
শাবনাজ, অভিনেত্রী
বুঝতে শেখার পর থেকেই আমি আর্জেন্টিনার সমর্থক। তার বড় কারণ ম্যারাডোনার অসাধারণ খেলা। তাঁর বল পাস, নিখুঁত শট মনে রাখার মতো। বিয়ের পর বাসার সবাই একসঙ্গে খেলা দেখতাম। খেলা উপলক্ষে আমি বাসায় রান্না করতাম। বুধবার আমি আর নাঈম একসঙ্গে বসেছিলাম। হঠাৎ বড় মেয়ে নামিরা এসে বলল, ‘ম্যারাডোনা মারা গেছেন।’ এ বছর আমরা অনেককে হারিয়েছি, তার মধ্যে ম্যারাডোনার চলে যাওয়ার খবর শুনে খারাপ লেগেছে।