ক্ষমতা হারানোর ভয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আ.লীগ নির্বাচনে যেতে চায় না: রিজভী
ক্ষমতা হারানো ভয়ে সরকার ‘নিরপেক্ষ ব্যবস্থা’য় নির্বাচন দিতে চায় না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
শুক্রবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকালে শেরে বাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর তিনি এই মন্তব্য করেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘‘ অর্থ পাচার করে, দুর্নীতি করে, মহালুটপাট করে, একটা দরজা-জানালার পর্দা ২২ লক্ষ টাকা –বিভিন্ন সেক্টরে এরকম অবাধ লুন্ঠনের মাধ্যমে তারা যে স্বর্গ রাজ্য প্রতিষ্ঠিত করেছেন এই স্বর্গ তারা বিদায় হতে চান না বলেই আহকে ওবায়দুল কাদের বলেছেন যে, বিএনপিকে মাথা থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভুত তাড়াতে হবে। আবার আইনমন্ত্রী বলছেন বিএনপিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি থেকে সরে আসতে হবে।”
‘‘ এটা তো উনরা বলবেনই। কারণ তত্বাবধায়ক সরকার হলে পরে, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে কী পরিণতি ওবায়দুল কাদের সাহেব বা আইনমন্ত্রী(আনিসুল হক) হবে সেটা তারা জানেনই। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের ভরাডুবি হতে পারে। সেজন্য তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে সুষ্ঠু নির্বাচন চান না।”
রিজভী বলেন, ‘‘ গণতন্ত্র ফিরে আসলে পরে তাদের দুর্বিনীত দুঃশাসন টিকবে না, গণতন্ত্র ফিরে আসলে পরে তাদের জন্য মহাবিপর্য্য়। কারণ আপনারা দেখেছেন তাদেরই সোনার ছেলেরা ছাত্র লীগ, তাদের হাতে তারা বই-কলমের বদলে লাঠি তুলে দিয়েছেন যা প্রমাণ কয়েকদিন আগে দেখেছেন।”
‘‘ একদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের সোনার ছেলেরা এবং ইডেন কলেজে তাদের স্বর্ণালী কন্যারা যে ঘটনা ঘটাচ্ছেন এটা তো নজিরবিহীন। এই সমস্ত ঘটনা অব্যাহত রাখতেই ওবায়দুল কাদের সাহেবরা বলছেন যে, বিএনপিকে তাদের মাথা থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের চিন্তা বাদ দিতে হবে। এটা তারা বলবেনই। তাদের অবাধ লুন্ঠন এবং ক্ষমতাকে চিরস্থায়ীভাবে ধরে রাখার জন্য এসব কথা বলছেন।”
বিদেশী রাষ্ট্রদূতদের বক্তব্যের প্রতি ইংগিত করে তিনি বলেন, ‘‘ অথচ তাদের(সরকার) কানে যায় না বিদেশীরা কী কথা বলছেন। যারা বাংলাদেশের রাজনীতির যে ডিনামিক্স পর্যেবেক্ষন করেন তারা কি কথা বলছেন? ইউরোপ-আমেরিকা কি কথা বলছেন? অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশ কি কথা বলছেন? তারা সামনে যে একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখতে চায় সেগুলো তাদের কানে যাচ্ছে না।
বলছেন? তারা সামনে যে একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখতে চায় সেগুলো তাদের কানে যাচ্ছে না।”
‘‘ কারণ আপনারা জানেন, যাদের অবৈধ সত্ত্বা আছে, যারা জনগনের ভোটকে সবচেয়ে বেশি ভয় পায় তারা তো নিরপেক্ষ নির্বাচনকে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে তো সমালোচনা করবেই, বিরোধিতা করবেই। তত্ত্বাবধায়ক সরকার হলে পরে তাদের যে সিংহাসন, তাদের যে গদি এই গদিটা ধসে যাবে। এই ভয়ে তারা বলছেন, বিএনপিকে এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের চিন্তা বাদ দিতে হবে।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিনের গণমাধ্যমে প্রচার-প্রচারণারও কঠোর সমালোচনা করেন রিজভী।
তিনি বলেন, ‘‘ তার জন্মদিনে খবর যে ধরনের প্রচার দেয়া হয়েছে বিভিন্ন প্রিন্ট মিডিয়া ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে। এটা আমরা বুঝতে পেরেছি যে, এটা চাপের কারণে, এটা নানাবিধ সরকারের হুমকির কারণে দেয়া হয়েছে। এদেশের কত বরণ্যে নেতা যারা স্বাধীনতা যুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন, স্বাধীনতার ঘোষণা করেছেন, স্বাধীনতার বানী শুনিয়েছেন তাদের খবর কিন্তু থাকেন না পত্রিকাতে, থাকলেও একবারে কোন কোনাতে বা কোনো জায়গাতে।”
‘‘ কিন্তু যিনি গণতন্ত্র হত্যা করলেন, যিনি গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে স্টিম রোলার চালিয়ে থেতলে দিচ্ছেন তার জন্মদিনে উপলক্ষে যে ধরনের প্রচার-প্রোপাগান্ডা আমরা দেখলাম তাতে এদেশের জনগন মনে করেছে যে, তার জন্মদিন মানে এদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের মৃত্যুদিন। আজকে গণতন্ত্রকামী মানুষ গত পরশুর দিনটিকে গণতন্ত্রের মৃত্যুদিন হিসেবে বিবেচনা করছে।”
জাতীয়তাবাদী উলামা দলের ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সংগঠনের আহ্বায়ক মাওলানা শাহ নেছারুল হক ও সদস্য মাওলানা নজরুল ইসলাম তালুকদারের নেতৃত্ব নেতা-কর্মীদের নিয়ে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতার কবরে পুস্পমাল্য অর্পন করে শ্রদ্ধা জানান রিজভী। পরে প্রয়াত নেতার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেন তিনি।
এই সময়ে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, উলামা দলের মাওলানা মো. সেলিম রেজা, মাওলানা আলমগীর হোসেন, মাওলানা কাজী আবুল হোসেন, মাওলানা এনামুল হক মাজেদী, ক্কারী এখলাস উদ্দিন বাবুল, হাফেজ মাসুম বিল্লাহ, মাওলানা নুরে আলম প্রমূখ নেতারা ছিলেন।