আফগানিস্তানে মানবিক সংকট বাড়ার নেপথ্যে মার্কিন নীতি

গত বছরের আগস্টে আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করে তালেবান। এরপর গত প্রায় ছয় মাসে আফগান অর্থনীতি ভেঙে পড়ার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। দেশটির বেশির ভাগ মানুষ এখন চরম দারিদ্র্য বা ক্ষুধাজনিত মৃত্যুর ঝুঁকির মুখে রয়েছে। তালেবান ক্ষমতা নেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র দেশটির জন্য সহায়তা বন্ধ করে দিয়েছে। একই সঙ্গে দেশটির প্রায় সাড়ে ৯০০ কোটি ডলার আটকে দিয়েছে। বলা হচ্ছে, মার্কিন নীতির কারণে এই অবস্থা হয়েছে দেশটিতে।

গত কয়েক বছর ধরে আফগানিস্তান খরা, মহামারি, অর্থনৈতিক দুরবস্থা এবং সংঘাতের মধ্যে রয়েছে। এবারের শীতে অর্ধেকেরও বেশি জনসংখ্যা দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন হবে এবং চলতি বছরে জনসংখ্যার ৯৭ শতাংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যেতে পারে বলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার আশঙ্কা।

সম্প্রতি জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) প্রধান ডেভিড বেসলি দেশটির মানবিক সংকট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, আফগান জনগণ বেঁচে থাকার জন্য তাদের সন্তান, এমনকি দেহের বিভিন্ন অঙ্গ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।

বেসলে বলেন, ২০ বছরে তালেবানের সঙ্গে সংঘর্ষের কারণে আফগানিস্তান ইতোমধ্যেই বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশে পরিণত হয়েছে। চরম দারিদ্র্যের কারণে আফগানিস্তানে একজন নারী তার মেয়েকে অন্য পরিবারের কাছে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। তাদের আশা, ঐ পরিবারে গিয়ে তার মেয়ে ভালো খাবার ও বস্ত্র পাবে। বর্তমান সংকট সমাধানে সাহাঘ্য করার জন্য তিনি বিশ্বের ধনী ব্যক্তিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

সম্প্রতি জাতিসংঘ মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতিতে বিশ্ব আফগানিস্তানকে বর্জন করতে পারে না। গত সপ্তাহে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে তিনি বলেন, ‘নৈতিক দায়িত্বের অংশ হিসেবে আমরা আফগানিস্তানের মানুষকে বর্জন করতে পারি না।’

তিনি বলেন, আফগানদের এখন যা প্রয়োজন, তা হলো—শান্তি, আশা ও সহযোগিতা। জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, আফগানিস্তানে চলতি শীতকালে অর্থনৈতিক সংকট আরও প্রকট হয়েছে। সেখানে এখন দৈনন্দিন জীবন যেন ‘শীতল নরক’। দেশটির অর্থনীতি পুনর্গঠনে তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও বেশি বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। জাতিসংঘ আফগান জনগণের মানবিক সংকট মোকাবিলায় ৫০০ কোটি ডলারের বেশি সহায়তা দিতে আহ্বান জানিয়েছেন।

ভক্স অনলাইনের এক খবরে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের আগস্টের আগ পর্যন্ত আফগানিস্তানের অর্থনীতি বিদেশি সাহাঘ্যের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু তালেবানের ক্ষমতা গ্রহণের পর দেশটিতে অর্থ প্রবাহ থেমে যায়। বেকারত্ব চরম আকারে বেড়েছে, ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। সেখানকার জনগণ ব্যাংক থেকে মাসে ১০০ ডলারের বেশি তুলতে পারছে না।

অর্থনৈতিক সংকটের কারণে শুধু আফগান জনগণ নয়, অনেক তালেবান সদস্য তাদের খাদ্য কিনতে পারছে না। যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের পর দোভাষী, সহায়তা কর্মী, আইনজীবী শিক্ষক ও সাংবাদিকদের অনেকেই তাদের চাকরি হারিয়েছেন। অনেকেই পালিয়ে বেড়াচ্ছেন, যারা তার পরিবারের কাছে প্রয়োজনীয় সামগ্রী পর্যন্ত পৌঁছে দিতে পারছেন না।

ইউএনএইচসিআরের আফগান মুখপাত্র বাবর বেলুচ সম্প্রতি বলেন, ‘আমরা যেখানেই যাই, সেখানে হাজার হাজার মানুষকে পাই, যাদের সহায়তা প্রয়োজন।’

বিশ্লেষকরা বলছেন, আফগানিস্তানের এই দুর্দশার সঙ্গে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার সম্পর্কিত। তালেবান ক্ষমতা নেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আর আন্তর্জাতিক সহায়তা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। আফগানিস্তানের দুর্বল অর্থনীতি সংকটের ঘূর্ণিপাকে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘ আফগানিস্তানে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনায় কিছু ছাড় দিয়েছে।

যদিও তা আফগান জনগণের প্রয়োজনের তুলনায় কোনোভাবেই যথেষ্ট নয়। দেশটির ব্যাংকিং কার্যক্রম কার্যত মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে জিম্মি হয়ে পড়েছে। জাতিসংঘের জরুরি সহায়তা সমন্বয়ক মার্টিন গ্রিফিথস বলেন, আফগান অর্থনীতি ঘুরে না দাঁড়ালে দেশটিতে সংকট আরও তীব্রতর হবে।

সূত্রঃ ইত্তেফাক