তাইগ্রে নেতাদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত অভিযানের নির্দেশ

ইথিওপিয়ার সংঘাতকবলিত তাইগ্রে অঞ্চলের রাজধানী মেকেলে ভিন্নমতাবলম্বী নেতাদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত দফার আক্রমণ শুরু করতে বৃহস্পতিবার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ। তিনি বলেছেন, তাঁদের আত্মসমর্পণের সময় পেরিয়ে গেছে। এএফপির খবরে এ কথা বলা হয়।

গত বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী প্রধানমন্ত্রী আবি গত রোববার স্থানীয় স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী টাইগ্রে পিপলস লিবারেশন ফ্রন্টকে (টিপিএলএফ) অস্ত্র সমর্পণে ৭২ ঘণ্টা সময় দেন। তবে আলটিমেটাম প্রত্যাখ্যান করেছেন ওই অঞ্চলের নেতারা।

ইথিওপিয়ার উত্তরাঞ্চলে তিন সপ্তাহ ধরে ফেডারেল সরকারের সেনাদের সঙ্গে লড়াই করছেন ওই ফ্রন্টের যোদ্ধারা। লড়াইয়ে কয়েক শ মানুষ নিহত ও ৪০ হাজারের বেশি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। সম্প্রতি দেশটির সেনাবাহিনী বলেছে, তারা ট্যাংক নিয়ে মেকেলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী আবি বলেন, টিপিএলএফের বিরুদ্ধে তাদের তৃতীয় ও শেষ দফার অভিযানের সমাপ্তি টানার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

চূড়ান্ত দফা অভিযানের হুমকি এবং মেকেলের ৫ লাখ বাসিন্দাকে নিয়ে আশঙ্কা বেড়ে যাওয়ায় চলতি সপ্তাহে দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা প্রতিষ্ঠায় কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ে গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ প্রথম বৈঠকেও বসেছে।

আবি বলেন, ‘চূড়ান্ত দফার এই আক্রমণকালে নিরীহ বেসামরিক লোকজনকে ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষায় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হবে। আমাদের জনগণ কঠোর শ্রমের মাধ্যমে মেকেলে শহরকে গড়ে তুলেছেন। শহরটি যাতে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে লক্ষ্যে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নিশ্চিত করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, সময়সীমা পার হওয়ার আগে টিপিএলএফের হাজার হাজার মিলিশিয়া ও বিশেষ বাহিনীর সদস্য ফেডারেল সরকারের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন।

সরকারি সেনারা মেকেলে শহরের কত কাছে পৌঁছেছেন, তা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তাইগ্রের সঙ্গে যাতায়াতের পথ বন্ধ ও খবরাখবর সংগ্রহের ওপর বিধিনিষেধ থাকায় কোনো পক্ষের দাবি যাচাই করা বেশ কঠিন।

লড়াই সম্পর্কে অবগত কিছু কূটনীতিক গত বুধবার এএফপিকে বলেন, মেকেলের উত্তর ও দক্ষিণ থেকে এদিন অন্তত ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিলেন ফেডারেল বাহিনীর সদস্যরা। চূড়ান্ত দফা অভিযানের হুমকি এবং মেকেলের ৫ লাখ বাসিন্দাকে নিয়ে আশঙ্কা বেড়ে যাওয়ায় চলতি সপ্তাহে দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা প্রতিষ্ঠায় কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ে গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ প্রথম বৈঠকেও বসেছে।

ইতিমধ্যে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বেসামরিক লোকজনকে রক্ষায় সবকিছু করার জন্য ইথিওপিয়ার নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। আর দেশটিতে আফ্রিকান ইউনিয়নের মাধ্যমে মধ্যস্থতাকে উৎসাহ জুগিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আন্তর্জাতিক অন্য শক্তিগুলো।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা সতর্ক করে বলেছে, মেকেলে শহরে বোমা হামলা হলে যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হতে পারে।

উদ্বেগের জবাবে প্রধানমন্ত্রী আবি বলেন, মেকেলে শহরে বেসামরিক লোকজন ও তাঁদের সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি ছাড়া কীভাবে টিপিএলএফকে পরাজিত করা যায়, সেই সতর্ক কৌশল ইথিওপিয়ার প্রতিরক্ষা বাহিনী গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা মেকেলের বাসিন্দাদের প্রতি আহ্বান জানাই, তাঁরা যেন বাড়িতে অবস্থান করেন ও সামরিক লক্ষ্যবস্তু থেকে দূরে থাকেন।’

তাইগ্রেতে ফেডারেল সেনাদের কয়েকটি ফাঁড়িতে হামলার জের ধরে ৪ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী আবি টিপিএলএফ মিলিশিয়াদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন। সরকার এই হামলার জন্য গোষ্ঠীটিকে দায়ী করেছে। অভিযান থামাতে কোনো আলাপ-আলোচনা ও সমঝোতার কথাও নাকচ করে দিয়েছে সরকার।

১৯৯১ সালে টিপিএলএফের নেতৃত্বে ইথিওপিয়া থেকে সামরিক সরকার উৎখাত করা হয়। ২০১৮ সালে আবি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগ পর্যন্ত দেশটির রাজনীতিতে নিয়ন্ত্রণ ছিল এই গোষ্ঠীর। তবে এরপর থেকে গোষ্ঠীটির নেতারা অভিযোগ করে আসছেন, আবি তাঁদের এড়িয়ে চলেছেন। দেশের দুর্দশাময় পরিস্থিতির জন্যও আবি সরকারকে অভিযুক্ত করেন তাঁরা। আর তখন থেকেই শুরু আঞ্চলিক নেতৃত্ব ও ফেডারেল সরকারের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *